আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের পথে, আজ ইসির জরুরি বৈঠক

আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর দলটির নিবন্ধন স্থগিত করার বিষয়টি আজ সোমবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জরুরি বৈঠকে উঠছে। সংশ্লিষ্ট গেজেট প্রকাশের পরপরই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে ইসি সূত্র।
সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। চলমান ‘জুলাই আন্দোলন’-এর মুখে শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকার দলটির যাবতীয় কার্যক্রম সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সরকার বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজই এ বিষয়ে সরকারিভাবে পরিপত্র জারি হওয়ার কথা রয়েছে।
পরিপত্র জারির সঙ্গে সঙ্গে দলটির নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন। পাঁচ সদস্যের কমিশন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন গতকাল বলেন, “আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এ বিষয়ে আইন রয়েছে। সরকার কোনো দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলে ইসিকে কী করতে হবে, তা নির্ধারিত। গেজেট জারি হলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।”
আইন কী বলছে?
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২-এর ৯০জ(১)(খ) ধারায় বলা আছে—নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে, নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। তবে প্রচলিত আইনে কোনো দলের কেবল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলে নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। এ কারণেই কমিশন নিবন্ধন বাতিল না করে আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন চাইলে সরকারের নিষেধাজ্ঞার আলোকে ৯০জ ধারায় নিবন্ধন বাতিল করতে পারে, আবার একই সঙ্গে আইনি ফাঁকফোকর বিবেচনায় নিয়ে নিবন্ধন স্থগিতের পথেও হাঁটতে পারে। বিশেষ করে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ৫ আগস্টের পর থেকে নিষ্ক্রিয় থাকায়, ৯০খ(১)(ক)(ই) ধারার আওতায়ও এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে।
সাবেক কমিশনারের মন্তব্য
সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল হবে কি না, সেটা নির্ভর করবে সরকারের আদেশ এবং নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর। যদি কোনো আইনি ভিত্তি ও প্রেক্ষাপট কমিশনের নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে কমিশন নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত—উভয় পথেই যেতে পারে।”
নিবন্ধন প্রক্রিয়া
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫০টি। আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ বি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন এবং বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি) নতুন করে নিবন্ধন পায়। তবে নিবন্ধন পাওয়ার পরপরই দলগুলোর কার্যক্রম ও শর্তপূরণ পর্যবেক্ষণে রেখেছে কমিশন।
এর আগে ৫৫টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে আইন লঙ্ঘন, শর্ত না মানা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি।
আপনার মতামত লিখুন