দাবি আদায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গণঅনশনের ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ১৬ মে, ২০২৫, ৩:৫৬
দাবি আদায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গণঅনশনের ঘোষণা

চার দফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেও সরকারের পক্ষ থেকে আশানুরূপ সাড়া না মেলায় আন্দোলনকারীরা গণঅনশনের ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে এই কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কাকরাইল মোড়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন বলেন, “আমরা জবি পরিবার ঐকমত্যে পৌঁছেছি—হয় দাবি আদায় হবে, নতুবা আমাদের মৃত্যু হবে। আজ দ্বিতীয় দিন পার হলেও সরকার আমাদের দাবির বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই আমরা গণঅনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এর আগে বিকেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। বুধবার শুরু হওয়া এই আন্দোলনের সূত্রপাত তিন দফা দাবিকে কেন্দ্র করে হলেও পরে তা চার দফায় রূপ নেয়। শিক্ষার্থীদের আবাসন, পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং পুলিশের হামলার তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তি—এই চার দাবিতে তারা অনড় রয়েছেন।

বুধবার দুপুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘লং মার্চ’ শুরু করেন পুরান ঢাকার ক্যাম্পাস থেকে। যাত্রাপথে তারা গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, সচিবালয়, শিক্ষা ভবন, হাইকোর্ট ও মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছান। পরে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে গেলে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জের মাধ্যমে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে।

এরপর আন্দোলনকারীরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। একপর্যায়ে বোতল নিক্ষেপে তার মাথায় আঘাত লাগে। এ সময় মাহফুজ বলেন, “আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে আপনারা পুলিশের অবস্থানকে ন্যায্যতা দিলেন।”

তবে ওই বৈঠকে আন্দোলনকারীদের দাবির বিষয়ে উপদেষ্টা কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিতে পারেননি। আন্দোলনকারীরা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী বাসে করে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন। শিক্ষকরা আসেন আলাদা মিনিবাসে। দিনভর চলে স্লোগান, অবস্থান ও বিক্ষোভ। বিকেলে আবারও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জরুরি বৈঠকে বসেন এবং মধ্যরাতে গণঅনশনের সিদ্ধান্ত নেন।

রইছ উদ্দীন জানান, “শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীরা একসাথে গণঅনশনে বসবেন। অবস্থান কর্মসূচি চলবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত।”