সিএমএম আদালতে বিচারকের সঙ্গে অশালীন আচরণ বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের, ভিডিও ভাইরাল

কেরাণীগঞ্জের একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন না মেলায় ঢাকার বিচারিক আদালতের এক বিচারককে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বলে গালি দিয়েছেন বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী। বিচারকের উদ্দেশে গালিগালাজ, হুমকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আদালত কক্ষ। ঘটনাটি ঘটে শনিবার দুপুরে, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের একটি এজলাসে।
হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হানিফ মেম্বার গত ১২ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ১৬ মে আইনজীবীরা নতুন করে জামিনের আবেদন করলে ১৮ মে তা খারিজ করে দেন বিচারক। এই আদেশে ক্ষুব্ধ হয়ে আইনজীবীরা বিচারককে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’, ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বলে সম্বোধন করেন এবং আদালতের কজলিস্ট ছুড়ে ফেলে দেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “জামিন নামঞ্জুরের পর আইনজীবীরা বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, শুনানি পুনর্বিবেচনার দাবি তোলেন। বিচারক তাদের বলেন, নতুন শুনানির জন্য সিজেএম স্যারের কাছে স্পেশাল পুটআপ দিতে। কিন্তু আইনজীবীরা জোর করে পুনরায় শুনানির চেষ্টা করেন, পরে বিচারককে লক্ষ্য করে গালিগালাজ করেন।”
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, আইনজীবী খোরশেদ আলম বিচারকের উদ্দেশে বলেন, “ঘটনার তারিখ, সময়, স্থান সব এক, দুইটা মামলা—এটা হয় নাকি?” এরপর তিনি এজলাস ত্যাগ করেন। এরপর আইনজীবী আবদুল খালেক মিলন বলেন, “শোনেন স্যার, আমাদের কারণে আপনি আজ এই চেয়ারে বসে আছেন। অন্যায় কোনো আবদার করিনি।” তিনি আরও বলেন, “আজ শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে আমরা গুম হতাম। আমরা কোর্টে রাজনীতি করেছি।”
একপর্যায়ে আইনজীবীরা উচ্চস্বরে বিচারকের দিকে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বলে চিৎকার করেন। এক আইনজীবী তাকে গালিও দেন।
মামলার বাদী ফজলুল হক জানান, ৫ মে তার বাড়িতে হামলা চালায় হানিফ মেম্বার ও তার অনুসারীরা। তারা বাড়ির ভাঙচুর করে, কেয়ারটেকারকে মারধর ও বেঁধে ফেলে এবং স্ত্রীকে যৌন নিপীড়ন করে। তারা ১০/১১ লাখ টাকার জিনিসপত্র লুট করে এবং এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে।
বাদী বলেন, হানিফ মেম্বার স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং দীর্ঘদিন মেম্বার পদে ছিলেন। জমি দখল, জালিয়াতি, গ্যাস সংযোগের নামে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার মতো নানা দুর্নীতিতে জড়িত তিনি। এমনকি মসজিদের জমিও বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ বাদীর।
ফজলুল হক বলেন, “হানিফ জেলে থেকেও মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। আমি একবার কোর্টে গিয়ে জামিনের বিরোধিতা করেছিলাম, তখন উকিলরাও হুমকি দেয়। কেরাণীগঞ্জে তার এত প্রভাব যে সাবেক এমপি কামরুল ইসলামও এতটা দেখাননি।”
বিচারকের উদ্দেশে প্রকাশ্যে এমন আচরণ বিচার বিভাগের মর্যাদা ও স্বাধীনতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন