সৌদিতে আটকে রেখে দুই ভাইকে হত্যা, পেছনে পাচারকারী চক্র

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা :
প্রকাশ: ২৩ মে, ২০২৫, ৫:০৯
সৌদিতে আটকে রেখে দুই ভাইকে হত্যা, পেছনে পাচারকারী চক্র

দুই ভাই কামরুজ্জামান কাকন ও কামরুল ইসলাম সাগর, ছবি - সংগৃহীত।

সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশি দুই ভাইয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন গাজীপুরের উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়া এলাকার  মোশারফ হোসেন লম্বরির দুই ছেলে—কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২)।

গত বুধবার দাম্মামের একটি আবাসিক ভবনে তাদের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। পরিবারটির দাবি, প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দুই ছেলেকে আটকে রেখে পরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মোশারফ হোসেন জানান, তার ছেলেদের বিদেশে ভালো ভবিষ্যতের আশায় সৌদি আরবে পাঠানোর উদ্যোগ নেন তিনি। স্থানীয় এক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য বাহার উদ্দিন প্রথমে কাজের জন্য কাকনকে সৌদিতে নিয়ে যান। কিন্তু চাকরির বদলে তাকে একটি ঘরে আটকে রেখে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করা হয়।

পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি টাকা দিতে বাধ্য হন। এরপরও কাকনকে ভালো চাকরির বদলে দেওয়া হয় ‘হান্গার স্টেশন’ নামের একটি খাবার ডেলিভারির কাজ। এরপর কানাডায় পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে ফের ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয় বাহার উদ্দিন। একইভাবে ছোট ছেলেকেও সৌদিতে নিয়ে আটকে রাখা হয়।

বছর শেষে বাহার উদ্দিন ওমরাহ ভিসার ছলে মোশারফ হোসেনকে সৌদিতে নিয়ে যান। সেখানেই দুই ছেলের দুর্দশার কথা তিনি জানেন—অত্যন্ত ছোট ঘরে রাখা, অপ্রতুল খাবার ও কাজের চরম অবমাননা।

দেশে ফেরার সময় বাহার উদ্দিন একটি পলিথিন মোড়ানো ব্যাগ মোশারফের হাতে দিয়ে ঢাকায় পৌঁছে দিতে বলেন। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে তল্লাশির সময় সৌদি পুলিশ ব্যাগ থেকে একটি ছোট থলে জব্দ করে। দেশে ফেরার পর বাহার দাবি করেন, ব্যাগে ১৩ লাখ টাকার সোনা ছিল এবং মোশারফকে তা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে চাপ দেন। এই নিয়ে তাকে একাধিকবার হুমকি দেওয়া হয়।

মোশারফ হোসেন জানান, হুমকির বিষয়টি জানিয়ে তিনি সদর থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। সর্বশেষ ৯ মে ঢাকা থেকে একদল অস্ত্রধারী লোক এসে তাকে খুঁজতে থাকে। মোশারফ না থাকায় তারা তার বৃদ্ধ পিতা আবুল কাশেম লম্বরিকে জিম্মি করে এবং দুই ছেলেকে হত্যা করার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে ৯৯৯-এ ফোন করা হলে পুলিশ এসে তার বাবাকে উদ্ধার করে।

মোশারফ হোসেন জানান, বুধবার রাত ১২টার দিকে এক প্রবাসী বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলের মৃত্যুর খবর দেন। সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে দুই ভাই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। দুপুরের পর দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ভবনের মালিক পুলিশে খবর দেন। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় ‘মঞ্জু’ নামের এক বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করে সৌদি পুলিশ।

মোশারফ হোসেনের দাবি, বাহার উদ্দিনই তার দুই ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে খুন করিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমার দুই ছেলেই আমার সব। ওদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। সেই স্বপ্নই এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে এসেছে।”

মোশারফ হোসেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে তার সন্তানদের লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছেন এবং হত্যার বিচার দাবি করেছেন।