ন্যাশনাল ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও ১ হাজার কোটি টাকা সহায়তা

তারল্য সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংককে ঈদের আগে ১ হাজার কোটি টাকার জরুরি সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ শতাংশ সুদে ৯০ দিনের জন্য এ সহায়তা অনুমোদন করা হয় বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
তিনি জানান, প্রচলিত ধারনার বিপরীতে ব্যাংকটির কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বন্ড না থাকায় ‘ডিমান্ড প্রমিসরি নোট’-এর (ডিপি নোট) বিপরীতে এই অর্থ দেওয়া হয়েছে। ঈদ সামনে থাকায় নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়, সে পরিস্থিতিতে ব্যাংকটিকে এই সহায়তা দেওয়া হয়।
এই নতুন সহায়তা নিয়ে চলতি বছরের ব্যবধানে ন্যাশনাল ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মোট ছয় হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হলো।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু গণমাধ্যমকে জানান, “ঈদের সময় রেমিট্যান্সে আসা অর্থ গ্রাহকদের স্বজনদের হাতে পৌঁছে দিতে ব্যাংকে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়। সেই চাহিদা মেটাতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছিলাম।”
তিনি বলেন, “ঈদের পরও পুরো এক হাজার কোটি টাকা ব্যবহার করতে হয়নি। আমানতের পরিমাণও বাড়ছে, তাই মিলে-মিশে চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে কোনো ব্যাংকে সহায়তা দেবে না। কিন্তু বাস্তবে তা ধরে রাখা যায়নি। তারল্য সংকটে পড়া বেশ কয়েকটি ব্যাংক, বিশেষ করে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংককেও টাকাপ্রিন্টের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা দিতে হয়েছে।
দীর্ঘদিন অনিয়ম, ঋণ জালিয়াতি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থের মধ্যে পড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সিকদার গ্রুপের হাতে। গ্রুপটির কর্ণধার জয়নুল হক সিকদারের মৃত্যুর পর তার সন্তানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, আর ব্যাংকের লভ্যাংশহীন পরিস্থিতি মিলিয়ে ব্যাংকটি আরও সংকটে পড়ে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে চেয়ারম্যান করা হয় সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে। তখন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত করার আলোচনা চললেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর ২০২৪ সালের মে মাসে নতুন পর্ষদে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমান সরকারের শুরুর দিকে এস আলম গ্রুপ কর্তৃত্ব হারালে ব্যাংকটির পুরনো উদ্যোক্তা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু আবার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ফেরেন। তখন থেকেই ব্যাংকটির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন