৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রত্যয়ের বার্তা

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ পালন করছে ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) আজ ১ জুলাই পালন করছে তাদের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তবে এবারের বার্ষিকী এসেছে এক ব্যতিক্রমী প্রেক্ষাপটে—২০২৪ সালের আগস্টের ভয়াবহ সহিংসতা পেরিয়ে একটি বিধ্বস্ত বাহিনীর সাহসী পুনর্গঠনের গল্প নিয়ে। পোড়া ভবন, লুট হওয়া অস্ত্র আর ভেঙে পড়া আস্থা—সবকিছু ছাপিয়ে আজ তারা দাঁড়িয়ে আছে পুনরুদ্ধার আর প্রত্যয়ের প্রতীক হয়ে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্র ধরে রাজশাহীজুড়ে শুরু হয় নজিরবিহীন সহিংসতা। সরকারি স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটে রাজশাহী নগরী রূপ নেয় এক বিভীষিকাময় শহরে। পুড়ে যায় ২৭টি গাড়ি, ধ্বংস হয় আরও ৫৬টি। আরএমপির সদর দপ্তর, ডিবি অফিস, ট্রাফিক বিভাগ, বোয়ালিয়া ও কাশিয়াডাঙ্গা থানাসহ ১৬টি পুলিশ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লুট হয়ে যায় ১৬৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, যার মধ্যে এখনও ১৭টি নিখোঁজ।
এই বিপর্যয়ের পর আরএমপি শুরু করে পুনর্গঠনের এক জেদি প্রচেষ্টা। গত ১১ মাসে তারা পুনর্নির্মাণ বা সংস্কার করেছে ৮টি প্রধান ভবন, যার মধ্যে রাজপাড়া থানা চালু হয়েছে নতুন ভবনে। ধ্বংসপ্রাপ্ত ৫৬টি গাড়ির মধ্যে ২৯টি মেরামত করে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে, কেনা হয়েছে আরও ৪টি নতুন পিকআপ। উদ্ধার করা হয়েছে লুট হওয়া অস্ত্রের ১৪৭টি।
যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির মতোই থেমে থাকেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নিয়মিত কার্যক্রম। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ১,৬২৫টি মামলা দায়ের হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে ১,৫৬৮ জন আসামি। উদ্ধার হয়েছে ১৪২ কেজি গাঁজা, ৫৯৪.৫ গ্রাম হেরোইন, ৯৯৩ পিস ইয়াবা ও ২,৯০০ পিস ট্যাপেন্টাডল। ট্রাফিক বিভাগ পরিচালিত অভিযানে ৫ হাজারের বেশি মামলা থেকে আদায় হয়েছে প্রায় ১.৫ কোটি টাকা জরিমানা, আটক হয়েছে ৩,৪৩৭টি যানবাহন।
‘আরএমপি তথ্য ও সেবা কেন্দ্র’-এর মাধ্যমে ৩৯৪টি হারানো মোবাইল ফোন উদ্ধার করে ফেরত দেওয়া হয়েছে প্রকৃত মালিকদের কাছে। একই সময়ে একাধিক আলোচিত মামলায় সাফল্য পেয়েছে তারা—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে কোরআন পোড়ানোর ঘটনার মূলহোতা, অটোরিকশায় যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং দুই হাতে পিস্তল নিয়ে গুলি ছোড়ার ঘটনার আসামিকে সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করেছে আরএমপি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, পোড়া ক্ষতকে শক্তিতে রূপান্তর করাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। গত বছর ছিল আমাদের জন্য এক ভয়াবহ অগ্নিপরীক্ষা। তবে আমরা গর্ব করে বলতে পারি, আরএমপি আজ ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, লুট হওয়া ১৭টি অস্ত্র উদ্ধারে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। যতদিন না সেগুলো উদ্ধার হবে, অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে—ততদিন অভিযান চলবে।
আরএমপির ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তাই আর শুধুই একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি এক সংগ্রামের জয়গাথা, যা দেখায় কীভাবে সাহস, শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে পুড়ে যাওয়া ছাই থেকে নতুন করে জেগে ওঠা যায়।
আপনার মতামত লিখুন