জাকারিয়া পিন্টুর নামের অপপ্রচারের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা :
প্রকাশ: ১ জুলাই, ২০২৫, ১:০৮
জাকারিয়া পিন্টুর নামের অপপ্রচারের অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলনে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু।

গত ৫ জুন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া ঘাট ইসলামপাড়া এলাকায় আধিপত্যা বিস্তার ও বালু মহাল দখল করতে হামলা চালায় নাটোরের লালপুরের কাকন বাহিনী। সেই হামলার সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রচার হয় কাকন বাহিনীর বিরেুদ্ধে। তবে এবার নতুন কৌশল নিয়েছেন কাকন। ওই হামলার ভিডিও ফুটেজেকে উল্টো ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর দিকে ঠেলে দিয়ে তার বিরুদ্ধে অপ্রপচার শুরু করেছেন।

এমনকি গত কয়েকদিনে কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনে ওই হামলার পেছনে জাকারিয়া পিন্টুর নাম জড়িয়ে সংবাদ প্রচার করিয়েছে কাকন বাহিনী। যার পুরোটাই বাস্তবতা বিবর্জিত, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সেই সঙ্গে নাটোরের বাগাতিপাড়ার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম কর্তৃক জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে তা ষড়যন্ত্রমূলক।

মঙ্গলবার (০১ জুলাই) দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ, অপপ্রচার, এবং মামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টু। ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং তাদের সকল সহযোগী অঙ্গ সংগঠন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম ফজলুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ৫ জুন আ.লীগ নেতা কাকন ও ছাত্রলীগ নেতা শহিদুল বাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সাড়া ঘাট এলাকায় অস্ত্রের মহড়া, গুলিবর্ষণ, ভাঙচুর, লুটপাট, সাধারণ মানুষকে মারধর করে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় গত ৭ জুন কাকন ও শহিদুল সহ মোট ৩৭ জনকে আসামি করে ঈশ্বরদী থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

এর আগে গত ২৬ মে একই বাহিনীর সন্ত্রাসীরা পদ্মার চরে চাষাবাদ করতে যাওয়া নিরীহ ৮ থেকে ১০ জন কৃষককে মারধর করে। সেইসঙ্গে ফসল নষ্ট সহ কৃষকের ২টি গরু ছিনিয়ে নিয়ে জবাই করে আনন্দ উল্লাসে ভুড়িভোজ করে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাড়া ঘাটের খড়িয়া দড়িয়া বালু মহাল ঘাটটি ঈশ্বরদীর স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মেহেদী হাসান ও তার কয়েকজন পার্টনার বিধি মোতাবেক সরকারি কোষাগারে অর্থ প্রদান করে সকল নিয়ম-নীতি মেনে অনুসরণ করে ১৪৩২ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা পেয়েছেন। তারা বৈধ রশিদের মাধ্যমে অর্থ আদায় করেন। অথচ সেই উল্লেখিত সেই ঘাটটি দখল করতে ও আধিপত্য বিস্তার করতে কাকন-শহিদুল বাহিনী হামলা করে। এখন তাদের সেই হামলার দায়ভার এখন তারা উল্টোভাবে অপপ্রচার করছে জাকারিয়া পিন্টুর নামে। অথচ জাকারিয়া পিন্টুর যেখানে কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা নাই।

লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, কাকন বাহিনীর হামলার যে ভিডিও ফুটেজ দ্বারা ঈশ্বরদী থানা ও নৌ পুলিশ শহিদুল-কাকন বাহিনীর ৬ জনকে অস্ত্র সহ গ্রেপ্তার করেছে, সেই একই ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে কিভাবে জাকারিয়া পিন্টুর নাম জড়িয়ে গত ২৮ জুন কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করলো তা বোধগম্য নয়। ঈশ্বরদী বিএনপির কিছু সুবিধাবাদি ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারী কাকন বাহিনীকে ব্যবহার করে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, কাকন-শহিদুল বাহিনীর হোতা ও মামলার বাদি শহিদুল মোল্লা ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বাগাতিপাড়া উপজেলা শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট বাগাতিপাড়া থানায় দায়েরকৃত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতাদের দায়েরকৃত মামলার এজাহার নামীয় ও গ্রেপ্তারী পরোয়ানাভুক্ত আসামি। ওয়ারেন্ট থাকা অবস্থায় কিভাবে শহিদুল মোল্লা স্বশরীরে থানায় গিয়ে জাকারিয়া পিন্টু সহ ৯ জনের নামে মামলা করলেন তা ভেবে দেখা দরকার।

সংবাদ সম্মেলনে জাকারিয়া পিন্টু বলেন, আমি গত ১১ ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছি। পাবনা-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছি। ঠিক সেই সময় এমন অপপ্রচার ষড়যন্ত্রের অংশ। আবার সাংবাদিকদের তথ্যগুলো বা অভিযোগগুলো যাচাই বাছাই করা উচিত ছিল। আমি যেহেতু জড়িত নই, তাই যে গণমাধ্যমগুলো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছেন তাদের কাছে অনুরোধ, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্যটা জনগণের সামনে তুলে ধরবেন। তা না হলে আমি অবশ্যই আইনের আশ্রয় নেবো এবং মানহানির মামলা করবো।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির দুলাল সরদার, পৌর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ওমর সুমার খান, পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান স্বপন, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসলাম হোসেন জুয়েল, সাবেক পৌর কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন জনি, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সুলতান আলী বিশ্বাস টনি, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন জুয়েল, সাঁড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আক্কাস আলী খান সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় অভিযুক্ত শহিদুল মোল্লার সাথে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ’জাকারিয়া পিন্টুর লোকজন আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করছে বিধায় মামলা করেছি। আমরা বৈধভাবে ইজারা নিয়ে ব্যবসা করছি। এর আগে তারা একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে কিছু নিরীহ মানুষকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়েছে। আর যে ভিডিও ফুটেজের কথা বলা হচ্ছে সেখানে জাকারিয়া পিন্টুর লোকজনই রয়েছে। সেখানে অস্ত্রের মহড়া সব তাদেরই লোকজন। তারাই উল্টা কথা বলছে।’

ছাত্রলীগ করা ও মামলার বিষয়ে শহিদুল মোল্লা বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের নেতা ছিলাম। আর দল করলে তো মামলা টামলা থাকেই। তেমনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটা মিথ্যা মামলা আমার নামে করেছে তারা।’

কাকনের সাথে কথা বলার জন্য মোবাইল নাম্বার চাইলে শহিদুল বলেন, ‘উনার নাম্বার নাই। তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না।’