শিশু হাসপাতাল: ৬৫ চিকিৎসক নিয়োগ ‘রাতের ভোটে’র মতোই

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ৪ জুলাই, ২০২৫, ৩:৪৮
শিশু হাসপাতাল: ৬৫ চিকিৎসক নিয়োগ ‘রাতের ভোটে’র মতোই

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে ৬৫ জন চিকিৎসক নিয়োগকে ‘রাতের ভোট’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বঞ্চিত ও সাধারণ চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানীর শ্যামলীতে শিশু হাসপাতালের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের সার্কুলার, পরীক্ষা, খাতা মূল্যায়ন বা মেধাক্রম অনুসারে ফল প্রকাশ হয়নি। তারা প্রশ্ন তোলেন, এত সংখ্যক নিয়োগ কীভাবে ও কোন ভিত্তিতে সম্পন্ন হলো?

বক্তারা জানান, চলতি বছরের ১২ ও ১৩ এপ্রিল হাসপাতালের পরিচালনা বোর্ডের ২২তম ও ২৩তম সভার পর ৩০ জুনের মধ্যে এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। চিকিৎসকদের দাবি, এই নিয়োগ ছিল একেবারেই অস্বচ্ছ এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে সম্পন্ন হয়েছে।

তারা বলেন, সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। এখানে সেটি পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই যারা আবেদন করেছেন, তারাই নিয়োগ পেয়েছেন। এর মাধ্যমে মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন।

নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বঞ্চিত চিকিৎসকরা বলেন, যখন নিয়োগ হয় টেবিলের নিচে লেনদেনের মাধ্যমে, তখন স্বাভাবিকভাবেই যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যদি তারা যোগ্যই হতেন, তাহলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আসতেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফার্টিলিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এসএম খালিদুজ্জামান। তিনি বলেন, এই নিয়োগের দায় সরাসরি পরিচালক প্রশাসনের এবং নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের। অতীতে একজন সম্মানিত চিকিৎসক, ডা. এমএম আজিজ, যেভাবে অসম্মানিত হয়েছেন—আমরা চাই না আর কেউ সে অবস্থায় পড়ুন।

তিনি আরো বলেন, এই নিয়োগ বাতিল করে নতুনভাবে মেধা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। চিকিৎসা একটি গৌরবময় পেশা, যেখানে রাজনীতি বা লেনদেনের সুযোগ নেই।

প্রতিবাদকারী চিকিৎসকরা এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দেন “কোটা না মেধা, মেধা মেধা”, “নব্য ফ্যাসিস্টদের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও”।

তাদের বক্তব্যে উঠে আসে, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এমন অস্বচ্ছ নিয়োগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান, দয়া করে মেধাকে জায়গা দিন, পেশাগত মর্যাদা রক্ষা করুন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটগ্রহণের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগকে ‘রাতের ভোট’ বলা হয়ে থাকে।

এবার শিশু হাসপাতালের বিতর্কিত নিয়োগেও একই উপমা টেনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বঞ্চিত চিকিৎসকরা।