খাসিয়ামারা নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ, আতঙ্কে শত শত পরিবার

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ৬ জুলাই, ২০২৫, ৩:৩৯
খাসিয়ামারা নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ, আতঙ্কে শত শত পরিবার

খাসিয়ামারা নদী ভাঙন।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে খাসিয়ামারা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর ও জনপদ। ভাঙনের তীব্রতায় আতঙ্কে দিন পার করছেন এলাকাবাসী। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে খাসিয়ামারা নদী দিক পরিবর্তন করে গ্রাস করছে একের পর এক গ্রাম।

সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় এবার ভাঙনের মাত্রা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর, টেংরাটিলা, টিলাগাঁওসহ একাধিক গ্রাম ইতোমধ্যে ভাঙনের শিকার হয়েছে। কোথাও বসতঘর ধসে পড়ছে নদীতে, কোথাও আবার পুকুর, বাগান ও ফসলি জমি হারিয়ে গেছে নদীগর্ভে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনের ফলে স্থানীয় আলীপুর বাজার, নির্মাণাধীন খাসিয়ামারা সেতু, আলীপুর নূরানী কিন্ডারগার্টেন, টেংরাটিলার আব্দুল করিম ও ব্যবসায়ী আব্দুর রহিমের বসতভিটা, পুকুর ও জমি চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। আলীপুর গ্রামের একাধিক পরিবার ইতোমধ্যে বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। তবে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা।

টেংরাটিলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, “আমার বসতবাড়ির অর্ধেকটাই নদীতে চলে গেছে। এইভাবে চললে আর ক’দিন পর ঘরবাড়ি থাকবে না।”
একই গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, “আমার ফসলি জমির অর্ধেকই খাসিয়ামারা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন অবশিষ্ট পুকুর ও ঘরবাড়িও হুমকিতে।”

আলীপুর গ্রামের ভানু বিবি বলেন, “গত ৫ বছরে অন্তত কয়েকবার বাড়ি স্থানান্তর করেছি। এখন তো আর জমিটুকুও নেই। ভাঙন বন্ধ না হলে পথে বসতে হবে।”
গ্রামেরই আরেক বাসিন্দা মফিজ মিয়া বলেন, “বছরের পর বছর ধরে চাষ করা জমি চোখের সামনে নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। সরকারের কেউ এখনো খোঁজও নেয়নি।”

সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, “খাসিয়ামারা নদী এখন ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না নিলে পুরো জনপদ হুমকিতে পড়বে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দোয়ারাবাজারের এসও সাদ্দাম হোসেন বলেন, “আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।”

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুপ রতন সিংহ জানান, “ভাঙনকবলিত আলীপুর ও টেংরাটিলা এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হবে।”