শোকাহত শিক্ষার্থীদের ৬ দফা, ক্ষোভের মুখে আসিফ নজরুল

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশু শিক্ষার্থীসহ ২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনায় শোকাহত শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে দিয়াবাড়ী গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন তারা। এতে পুরো এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
‘বিচার চাই না, সন্তানের লাশ চাই’, ‘সঠিক লাশের হিসাব চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এমন স্লোগান লেখা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, তারা কোনো সহিংসতা চান না, তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে তারা রাজপথে। এত বড় দুর্ঘটনার পরও কেউ দায় নিচ্ছে না, কোনো তদন্ত বা শাস্তির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বক্তব্য আসেনি এটা গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে মন্তব্য করেন তারা।
শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন: নিহতদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ, আহতদের নির্ভুল তালিকা, শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা, নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, ঝুঁকিপূর্ণ প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল এবং সামরিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতির সংস্কার।
বিক্ষোভ চলাকালে দেখা যায়, কলেজের ভেতর থেকে প্রশাসনের কয়েকটি গাড়ি বের হওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা সেগুলো ঘিরে ধরেন এবং ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ পরিদর্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার সময় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। ফেরার সময় তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকলে তিনি কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন, তবে শিক্ষার্থীরা তাতে কর্ণপাত না করে তার চলার পথ আটকে দেন।
এর আগে সোমবার দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই মডেলের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান দিয়াবাড়ীতে অবতরণের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুলের মূল ভবনের কাছে বিধ্বস্ত হয়। মাত্র ১২ মিনিট আগে বিমানটি উড্ডয়ন করেছিল। বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়। এতে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরসহ ২৭ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ২৫ জনই শিশু শিক্ষার্থী এবং একজন শিক্ষিকা।
এ মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকে দেশজুড়ে চলছে শোক, ক্ষোভ এবং নানা প্রশ্ন। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি এবং দায়ীদের জবাবদিহির দাবিতে সরব হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ।
আপনার মতামত লিখুন