বিএনপির দ্বন্দ্বে রাউজান উত্তপ্ত, গুলিতে আহত গোলাম আকবর হাসপাতালে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম:
প্রকাশ: ২৯ জুলাই, ২০২৫, ২:২১
বিএনপির দ্বন্দ্বে রাউজান উত্তপ্ত, গুলিতে আহত গোলাম আকবর হাসপাতালে

চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক পরিবেশ। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে রাউজান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সত্তারঘাট এলাকায় এই সহিংসতা ঘটে। সংঘর্ষে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারসহ তার অনুসারী বহু নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি গোলাম আকবর খোন্দকার একটি কবর জিয়ারতে যাচ্ছিলেন। একই সময়ে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে ওই এলাকায় পৌঁছালে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়।

খোন্দকারের গাড়িবহরে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। তার ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন কুমার নাথ জানিয়েছেন, খোন্দকার স্যারের গলার পাশ দিয়ে গুলি ছুঁড়ে গেছে। রক্তপাত হচ্ছিল, দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় রাউজান উপজেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের বহু নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন—সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাবেক সম্পাদক নাসিম উদ্দিন চৌধুরী, সহকারী আসিকুর রহমান,  যুবদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন, বিএনপি নেতা আওরঙ্গজেব সম্রাট, ছাত্রদল সহসভাপতি  নাঈম উদ্দিন মিনহাজসহ আরও অনেকে।

সংঘর্ষের পর গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। বর্তমানে পুরো রাউজান এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে।

গোলাম আকবর খোন্দকার অভিযোগ করে বলেন, আগেই খবর পেয়েছিলাম হামলা হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। সত্তারঘাট ব্রিজ পার হওয়ার পরপরই আমাদের ওপর পরিকল্পিত হামলা হয়।

অন্যদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, আমি অসুস্থ, গত এক সপ্তাহ ধরে ঘরে বিশ্রামে আছি। সংঘর্ষের বিষয়ে কিছুই জানি না।

তবে তার অনুসারী রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, গোলাম আকবরের লোকজন পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে আমাদের বর্ষপূর্তি কর্মসূচি বানচাল করেছে। বাইরে থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে হামলা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছর থেকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত এক বছরে ১৩টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ১০টি ছিল রাজনৈতিক সংঘর্ষজনিত। শতাধিকবার সংঘর্ষে প্রায় তিন শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে। রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, একপক্ষ কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিল, আরেকপক্ষ ছিল শোভাযাত্রায়। মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ দ্রুত গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় মামলা ও তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি, রাউজানে বারবার বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে, যা দমন না করলে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।