যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক সমঝোতা, দেশীয় বাণিজ্য থাকবে সুরক্ষিত: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন, ফাইল ছবি।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক শুল্ক চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পথে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর উভয় দেশের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “আমার মনে হয় একটি যৌথ বিবৃতি হয়তো শিগগিরই আসবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতির ভিত্তিতে আমরা গোপনীয়তার বিষয়টি প্রকাশ করবো।”
তিনি জানান, চুক্তির কিছু বিষয় আগে থেকেই প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তবে নিশ্চিত করেছেন যে প্রকাশিত তথ্যের মধ্যে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু ছিল না। “যেসব বিষয় দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে পারত, তা আমরা আলোচনার মাধ্যমে বাদ দিয়েছি,”— বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, চলতি বছরের ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। পরে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে এই হার কিছুটা কমিয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্র, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৯ জুলাই থেকে। তবে সময় বাড়িয়ে তা ১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার এই শুল্ক চাপে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (USTR) সঙ্গে একাধিক দফায় আলোচনা করে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত তৃতীয় এবং চূড়ান্ত দফার আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল।
আলোচনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দেয়, পাশাপাশি কিছুটা বেশি দামে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন করে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, এই অর্ডারগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষিতে বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।
শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির সময় আমরা একটি নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টে (NDA) স্বাক্ষর করেছি। এমন চুক্তি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। দেশের স্বার্থহানী হয় এমন কোনো শর্ত থাকলে তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিতে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়েছে, ফলে আলোচনায় গোপনীয়তার বিষয়টি বাধ্যতামূলক ছিল। তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পর তথ্য অধিকারের আওতায় আমরা বিষয়টি জনসমক্ষে আনার চেষ্টা করবো।”
সরকারের তরফে বলা হয়েছে, এই চুক্তির ফলে দেশের বাণিজ্য সক্ষমতা ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী লাভজনক সমঝোতায় উপনীত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, যৌথ বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে শুল্ক আলোচনার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হতে পারে। এতে নতুন শুল্ক কাঠামো, বাণিজ্য সুবিধা এবং পারস্পরিক অঙ্গীকার সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন