উপকূলে গাছে গাছে আমের মুকুল, ছড়াচ্ছে ঘ্রাণ

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি:
মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে উপকূলীয় বরগুনার বেতাগী উপজেলার আমের বাগানগুলো। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে এ যেন বাগান মালিকদের সোনায় সহাগা। অন্যান্য প্রতিটি গাছে আসতে শুরু করেছে মুকুলের মোহ। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আম উৎপাদিত হবে বলে কৃষি বিভাগ ধারণা করছেন।
চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ, ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা বাতাস। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। যে গন্ধ মানুষের মন ও প্রাণকে বিমোহিতসহ মুকুলের আশেপাশে মৌমাছির আনাগোনা। অনেকেই মুকুল রক্ষা করতে বাগান মালিকরা পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে গাছে গাছে ওষুধ স্প্রে করতে দেখা যাচ্ছে। অনেক আমবাগান মালিক বলছেন এ বছর আমের ফলন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর।
মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম প্রতিটি গাছ। মৌমাছিরাও আসতে শুরু করেছে মধু আহরণে। শীতের জড়তা কাটিয়ে কোকিলের সেই সুমধুর কুহুতানে পাগল করতে আবারও ফিরে আসছে বাংলার বুক মাতাল করা ঋতুরাজ বসন্ত।
এ বছর আমের মুকুলের সোনালি রঙয়ের নান্দনিক দৃশ্য অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি লক্ষণীয়। তাই চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আমের ভালো ফলন হবে – এমন আশাবাদ স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগের।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, আম গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা ঘ্রাণ। বড় আকারের চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গাছে এবার বেশি মুকুল ফুটেছে। সেই মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে বাগান মালিকদের চোখে ভাসছে স্বপ্ন। পুরোপুরি মুকুল ফুটতে আরো কয়েক সপ্তাহ লাগবে বলে জানান বাগান মালিকরা।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেল, আমচাষ লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় প্রতিবছরই বাড়ির আঙিনা, পুকুরের পাড়, রাস্তার পাশে ও ছাদকৃষিসহ বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় আমের বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। নতুন গড়ে ওঠা আমের বাগানগুলোতে বেশির ভাগ গাছই হলো কাটিমন, আম্রপালি, ল্যাংড়া, ফজলি, গোপালভোগ ইত্যাদি জাতের। এসব আম খেতে যেমন সুমিষ্ট, বাজারেও এগুলোর চাহিদা ব্যাপক। তাই কৃষকরা এসব জাতের চারা সংগ্রহ করে তারা বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদনের দিকে নজর বেশি দিচ্ছেন।
উপজেলার বিবিচিচনি ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের জাহাঙ্গীর ও রানিপুর গ্রামের নিজাম জানান, ঘন কুয়াশার কারণে আমের মুকুলের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এতে আমের উৎপাদন কমে যেতে পারে। ফলে কৃষকেরা তাদের আম গাছ রক্ষায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের ও সহকারীদের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান।
একাধিক আম চাষি বলেন, ‘বাড়তি ফলনের জন্য এবং পোকামুক্ত আর আমের রং ঠিক রাখতে কীটনাশক ও ভিটামিন দিয়ে আমের গাছ স্প্রে করছি। গাছের গোড়ায় জৈব সারসহ সেচ দিয়েছি যে কারণে মুকুল ভরে গেছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমের উৎপাদন বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি পাওয়ার আশা করা যাচ্ছে। আমবাগানের সঠিক পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে সার্বক্ষণিক কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা নিয়োজিত রয়েছেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে এখনো আম চাষ এ উপজেলা শুরু হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন