তরুণ কবি আকাশমণির কবিতা

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশ: ১৬ জুলাই, ২০২৫, ৭:৫৩
তরুণ কবি আকাশমণির কবিতা

নড়াইলের দেবদুন গ্রামে, মধুমতী নদীর কোল ঘেঁষে, ১৯৮০ সালের ৩ জুন জন্মগ্রহণ করেন কবি আকাশমণি। শৈশবে তিনি এসএম সুলতানের চিত্রকর্মে যে অস্পৃশ্য ও প্রান্তিক জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখেছিলেন, তা তার মননে এক গভীর মানবিক বোধের জন্ম দেয়। সেই বোধই পরবর্তীতে মানুষ ও তার যাপনযুদ্ধকে নিয়ে কবিতার ভাষায় আলেখ্য রচনার প্রেরণা হয়ে ওঠে।

কৈশোর কেটেছে ক্যান্টনমেন্টে বাবার বুটের শব্দে ঘেরা পরিবেশে। সেখানেও তিনি অনুভব করেছেন মানুষের অন্তর্লীন যুদ্ধ, ইতিহাসঘন যাতনার ছাপ। তাঁর ভাবনায় বারবার ফিরে এসেছে ‘লেফট-রাইট’ শব্দের প্রতীকী ধ্বনি যেটা কখনো ছিল আনুগত্যের প্রতিধ্বনি, কখনো বা প্রতিরোধের।

কবি আকাশমণির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো: মেঘঝরা দুপুরে, বৃষ্টির ছন্দে মাটির গন্ধে, ঈশ্বর এ পাড়ায় থাকে না এবং সর্বশেষ ২০২৫ বইমেলায় প্রকাশিত স্বপ্ন ভাঙার শব্দ হয় না। এই গ্রন্থগুলোতে মানুষ, প্রকৃতি, প্রান্তিকতা ও প্রতিরোধ সবকিছু মিলেই গড়ে উঠেছে এক অনন্য কাব্যভুবন।

চায় না দিতে ভোট
যে আসে সে ই তো চায় না দিতে ভোট
ভোটের কথা বললে মনে লাগে চোট।
গণতান্ত্রিক এই বাংলাদেশে
ভোট দিবে ভালোবেসে
জনগণের ভোটে গঠিত হবে সরকার
নয় ছয় আল বালের বুঝ কি দরকার।
জনগণ চায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন
মসনদ প্রেম ছেড়ে করো তা আয়োজন।

 

চাটুকার

চাটুকারিতা তেল মেরে
এর কথা ওকে বলে
নীজেকে ভাবে নেতা।
আপন মনে সুখ খোঁজে
সম্পর্ক করে তিতা।
ফিসফিস কান কথায়
বাঁধাই তারা গোল
সুযোগ বুঝে স্বীয় স্বার্থে
পাল্টে ফেলে বোল।
নেতারাও তাদের স্বার্থে
চাটুকার রাখে পুষে
মনে মনে তিন বেলায়
চড় মারে কষে।

 

মাথায় আছে কিছু…

৫ যখন ভাবে ও ই সবকিছু
৩০-৩৫ মিটমিটিয়ে হাসে
ভাবে মাথায় আছে কিছু…
বাকি ৩০ নিয়ে সবার টানাটানি
৩০ বলে সুযোগ দিয়ে দেখ
আমরা কাকে মানি…
৫ ক্ষমতা পেয়ে নীজেকে ভাবে হনু
৩০/৩৫ ঘুরে দাঁড়ালে
পালানোর পথ পাবে না মনু…

 

আঁকছে পৈশাচিক ছক

মানুষ ভোট তৃষ্ণায় তৃষিত হয়ে আছে
মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিতে
জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার
থাকবে জনগণের পাশে সুখে-দুঃখে।
যাদের হেরে যাওয়ার ভয় মনে
তারা ভোট চায় না,ভোটের পক্ষেও না।
আঁকছে বসে পৈশাচিক ছক
সাথে নিয়ে ধর্মীয় বক…
ক্ষমতার মোহে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত
দেশ ধ্বংস হোক, মানুষ মরে যাক
কিছুতেই যায় আসে না তাদের
এরা মসনদ প্রেমে এতোটাই আসক্ত।

ভোট হোক সুষ্ঠু নির্দলীয় নিরপেক্ষ।

 

ইন্দুর বান্দর দিয়ে রাজ্য চলে না

ঘুমান্ত বাঘের পাশে
ইন্দুর বান্দরগুলো তিড়িংবিড়িং ফালপারে
যেন রাজ্যটা তাদের দখলে, তাদের কথাতেই চলে।
নির্বোধ প্রাণ ধৈর্যের বাঁধভেঙে সাহসের বুকচিরে
রাজ্যের বিশ্বস্ত তারকাঁটা উড়িয়ে দিতে চায়।

ক্ষমতার মোহে আসক্ত শুয়োরগুলো বোঝে না
রাজা ঘুম ভেঙে হুংকার দিলে কি হতে পারে…
অতন্দ্র বিশ্বস্ত তারকাঁটা একটু ভাতঘুম দিলে
ফালপারা ইন্দুর বান্দর নিমেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

নীরবতা,দূর্বলভাবা ছাগলের ছাগলামি গায়ে না মেখে
শান্তির সুবাতাস বয়ে দিতে চায় প্রতিটি ঘরে
ছাগলগুলো বোঝে না
ইন্দুর বান্দর দিয়ে রাজ্য চলে না…

শান্তি প্রিয় প্রতিটি নিরীহ প্রাণ চায়
সকলের সম্মতিতে একজন নির্বাচিত রাজা
যার সুশাসনে রাজ্যের প্রতিটি প্রাণ শান্তিতে নিরাপদে থাকবে।

প্রজাপতি উড়বে, টুনটুনি মনের আনন্দে লাঁফাবে
মনের সুখে গান ধরবে কোকিল
সুর আর ফুলের সুরভিতে মোহিত হয়ে
আপন কর্মে ব্যস্ত থাকবে রাজ্যের প্রতিটি প্রাণ।

 

প্রতিটি অপেক্ষার ভোর হয়

দিনের ব্যস্ততা পেছনে ফেলে রাতের অপেক্ষা
রাত যত গভীর হয় অপেক্ষা ততই মধুর হয়ে ওঠে
তোমার কন্ঠ শোনার অপেক্ষা,মনের আঙিনায়
আলতা পরা সর্পিল পায়ের শব্দ শোনার অপেক্ষা।
প্রতিটি অপেক্ষার ভোর হয়
ক্লান্ত চোখে দিনের ব্যস্ততায় হারায়
তবুও অপেক্ষার সুখ বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়।
তুমিও হয় তো বা কারোর জন্য অপেক্ষা করো
যেখানে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই
সে-ও বোধহয় অন্য কারো অপেক্ষায় প্রহর গুনে
যেমন তোমার জন্য আমার নিগুঢ় অপেক্ষা
তুমি কি আমার মতো অপেক্ষাতে সুখ খুঁজো
না কি অপেক্ষার যন্ত্রণায় জ্বলেপুড়ে মরো…?