দেশে কর্পোরেট কর ফাঁকির পরিমাণ বছরে লক্ষ কোটির ঘরে, সংস্কারে জোর তাগিদ সিপিডির

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৩৮
দেশে কর্পোরেট কর ফাঁকির পরিমাণ বছরে লক্ষ কোটির ঘরে, সংস্কারে জোর তাগিদ সিপিডির

দেশে কর্পোরেট আয়কর ফাঁকির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ২০১২ সালে এই পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা, যা ২০১৫ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৩ কোটিতে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে দেশে মোট কর ফাঁকি হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, যার অর্ধেকই কর্পোরেট ট্যাক্স ফাঁকি।

সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ‘কর্পোরেট আয়কর সংস্কার ও কর ন্যায্যতার দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট তামিম আহমেদ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে কর্পোরেট ট্যাক্স জিডিপির মাত্র ৬ শতাংশ, যেখানে উন্নত দেশগুলোতে এই হার প্রায় ১৫ শতাংশ। এই পার্থক্যের পেছনে বড় কারণ হিসেবে আন্ডার রিপোর্টিং এবং কর ফাঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজেট এলেই এনবিআরের ওপর বিভিন্ন প্রেসার গ্রুপ চাপ সৃষ্টি করে। ফলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকলেও বাস্তবে সেগুলো পূরণ হয় না। তিনি কর কাঠামোকে রাজনৈতিক বিবেচনা নির্ভর বলেও সমালোচনা করেন।

তামিম আহমেদ বলেন, দেশে নিবন্ধিত ২ লাখ ৮৮ হাজার কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। এই হার ধীরে ধীরে ৫৯ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হলে, ২০২৯ সালে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা হারানোর পর রাজস্ব ঘাটতি সামাল দেওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, রিটার্ন না দেওয়া যেন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়, এমন আইন প্রণয়ন প্রয়োজন। বিদ্যুৎ বিল না দিলে যেমন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, তেমনি আয়কর রিটার্ন না দিলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, — যোগ করেন তিনি।

সিপিডির প্রতিবেদনে উঠে আসে, কর ব্যবস্থার অটোমেশন প্রক্রিয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ঘুষ। যারা রিটার্ন জমা দেন, তাদের মধ্যে ৪৫ শতাংশই ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজস্ব কর্মকর্তারা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রিটার্ন নিতে বেশি আগ্রহী, কারণ এতে ঘুষ নেওয়ার সুযোগ থাকে।

বক্তারা সুপারিশসমূহ করেন, কর্পোরেট ট্যাক্স রেট ২৩%-এ নামিয়ে আনা, অটোমেশন বৃদ্ধি ও ঘুষ প্রতিরোধ, রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রণোদনা প্রদান বন্ধ ও রিটার্ন না দেওয়া অপরাধ গণ্য করে ব্যবস্থা গ্রহণ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ক্রিশ্চিয়ান এইড-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর নুসহাত জাবিন, প্রাইভেট কোম্পানির গ্রুপ সিএফও জাহিদ হোসেন, সিপিডির নির্বাহী পরিচালকসহ অন্যান্য অর্থনীতি বিশ্লেষকগণ।