নামমাত্র ভাইবা নিয়ে কুবি ছাত্রদল নেতাকে নৃবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩-২৪ স্নাতকোত্তরে শিক্ষার্থীদের আপত্তি সত্তেও নতুন কারিকুলাম ওবিই (আউটকাম বেইজড কারিকুলাম) চালু করা হয়েছে। ছাত্রদলের দুইনেতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে পুনর্বাসন করতে এমন উদ্যোগ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভাগটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বারংবার আপত্তি জানানোর পরেও বিভাগীয় প্রধান নিজে উদ্যোগে বিভাগে নতুন কারিকুলাম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর করবে না বলে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানালে তিনি কাউকে জোর করে পড়াতে চাই না বলে মন্তব্য করেছেন বলেও জানা গেছে।
এদিকে প্রশাসনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় প্রধান সাবেক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে ওবিই কারিকুলাম প্রশাসন থেকে চেয়ে নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আবুল বাশার ও যুগ্ম আহবায়ক সাফায়েত সজলকে ভর্তি নিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ১৬ জুলাই তাদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছে নৃবিজ্ঞান বিভাগ। তাদের মধ্যে সাফায়েত সজল কুবির বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং তিনি বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন। জানা যায় রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যেই ডাবল মাস্টার্স করছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩ জুলাই স্নাতকোত্তরে ভর্তির আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নৃবিজ্ঞান বিভাগ। তবে বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে কতজন শিক্ষার্থী নেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ্য করা হয়নি। এছাড়াও শিক্ষার্থীর বয়স, স্টাডি গ্যাপ ইত্যাদি বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, করোনার কারণে দেড় বছর সেশনজটে পড়ে থাকার কারণে ওবিই কারিকুলাম যাতে চালু না করা হয় সেজন্য আমরা বারংবার আপত্তি জানাই। বেশ কয়েকবার বিষয়টি নিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিং ও আলোচনা করি। তখন বিভাগ আমাদের জানায়, ওবিই চালু করতে প্রশাসনের চাপ আছে। কিন্তু আমরা জানতে পারি বিভাগীয় প্রধান প্রশাসন থেকে চেয়ে এই কারিকুলাম নিয়ে এসেছেন। তখন আমরা মাস্টার্স করব না বলে প্রতিবাদ জানালে এক প্রসঙ্গে ‘কাউকে জোর করে পড়াতে চাই না’বলেও মন্তব্য করেন। পরে এক বছরের মধ্যে মাস্টার্স প্রোগ্রাম শেষ করে দেওয়া হবে- এমন শর্তসাপেক্ষে ওবিই প্রোগ্রাম চালু হয়। তবে পরবর্তীতে জানতে পারি ছাত্রদলের দুই নেতাকে ভর্তি করতে তিনি ওবিই কারিকুলাম চালু করেন। এছাড়া ওবিই কারিকুলাম প্রত্যাহারের জন্য ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছিলেন তারা।
তারা আরও বলেন, যারা ভর্তি হয়েছে, তারা কেউই পাশ হয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য কিংবা অ্যাকাডেমিক নলেজ অর্জনের জন্য ভর্তি হননি। তারা ফেল হওয়ার জন্যই ভর্তি হয়েছে। ছাত্রত্ব আছে এই দাবি করে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করে যাবে। আর এটার সাফার করবে আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রনয়ন না করেই শুধুমাত্র নামমাত্র ভাইবা নিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভাগ কে রাজনৈতিক করণ করার নেতিবাচক প্রভাব সবাইকে ভোগ করতে হবে। এতে বিভাগের পরিবেশ যেমন নষ্ট হবে, তেমনি রাজনৈতিক বলয়ের সৃষ্টি হবে। ফলশ্রুতিতে পরবর্তী ব্যাচ গুলো সেশন জট সহ অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এআইএস, প্রত্নতত্ব সহ আরো অন্যান্য অনেক গুলো বিভাগে ওবিই কারিকুলামে মাস্টার্স কোর্স চালু থাকলে ও কোনো বিভাগ ই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এরকম নামমাত্র ভাইবার মাধ্যমে রানিং মাস্টার্সে কাউকে ভর্তির সুযোগ দেয়নি।
গত ১৭ জুন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে বিভাগীয় প্রধান জানান, তিনজন শিক্ষার্থী ভাইভায় অংশ নিয়েছেন—যাদের মধ্যে আবুল বাশার, সাফায়েত সজল এবং বোরহানউদ্দিন কলেজের এক শিক্ষার্থী ছিলেন। সাফায়েতকে উদ্দেশ্য করে তিনি প্রশ্ন করেন, তিনি নৃবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা করতে পারবেন কি না। উত্তরে তিনি জানান, গবেষণা এবং পাস—উভয়ই সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, তারা ফেল করলেও তাতে বিভাগের কোনো ক্ষতি নেই। এটা বিভাগের জন্য নতুন মাইলফলক।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এভাবে চলতে নৃবিজ্ঞান বিভাগ আদুভাই ও ছাত্ররাজনীতিবিদদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে।
এবিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন বলেন, আমি এসব নিয়ে ওভার দা ফোনে কিছু বলতে পারবো না। এই নিউজ ইনটেশনালী কে করাচ্ছে আমি জানি। আপনি রবিবার আসেন। তখন আপনার সাথে সরাসরি কথা বলবো।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের প্রধান নুরুল করিম চৌধুরী বলেন, ভর্তির পদ্ধতি বিভাগ নির্ধারণ করে। তারা চাইলে লিখিত অথবা ভাইভা নিতে পারে।
ভাইভায় শুধু পরিচয় এবং পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন কি না—এটুকুই জানতে চাওয়া হলে সেটা যথাযথ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাজ কমিটি করে দেওয়া। তা করে দিয়েছি। এখন তারা কীভাবে করেছে, সেটা তারা বলতে পারবে।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, এটা খুবই উদ্বেগের ব্যাপার। একটি ছেলে অনেক কষ্ট করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সে পড়ার জন্য ভর্তি হয়, সেখানে শুধু মুখের দুইটা কথা দিয়ে কীভাবে যাচাই করা হবে? এ ধরণের একটি কারিকুলামে কোনো নীতিমালা ছাড়া ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে শুধু ডিপার্টমেন্টের উপর ছেড়ে দেয়া উচিত না। আমরা এ বিষয়ে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করবো।
আপনার মতামত লিখুন