প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১ জুলাই, ২০২৫, ৪:৪৮
প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার

ফাইল ছবি।

২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী আয় বড় ধরনের বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এ মাসে বৈধ চ্যানেলে দেশে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ কোটি ডলার বা ১১ শতাংশ বেশি।

এই প্রবৃদ্ধির ফলে প্রবাসী আয় প্রথমবারের মতো ৩০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে মোট বৈধ রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে যা ছিল ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৪১ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধির হার ২৬ দশমিক ৮২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক এই ধারা ও রপ্তানি আয়ের ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ঋণ সহায়তায় বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত ২৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চলতি অর্থবছরের জুন মাস একক মাস হিসেবে রেমিট্যান্স প্রবাহের দিক থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে কেবল গত মার্চে (৩৩০ কোটি ডলার) ও মে মাসে (২৯৭ কোটি ডলার)। জুন মাসে ঈদের কারণে ব্যাংকিং কার্যক্রম কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও রেমিট্যান্স প্রবাহে তা বড় কোনো প্রভাব ফেলেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হুন্ডির প্রবাহ কমে যাওয়ায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুশাসনমুখী পদক্ষেপ। বিশেষ করে অর্থপাচার ও ঋণ জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ১০ জন রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তদন্তের প্রেক্ষাপটে পাচারকারীরা চাপে পড়েছেন।

সরকারের প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে কিছু সম্পদ জব্দ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। ফলে প্রবাসীরা আগের চেয়ে বেশি হারে বৈধ পথে অর্থ পাঠাচ্ছেন।

এদিকে, রিজার্ভের হিসাব প্রকাশে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন দুটি মানদণ্ড অনুসরণ করছে। গ্রস রিজার্ভের আওতায় ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে সংযুক্ত অর্থও ধরা হচ্ছে, যা বর্তমানে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী (ঋণ ব্যতীত রিজার্ভ) রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় এই রিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়নে নেমে গিয়েছিল। অথচ এর আগের সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ২০২১ সালের আগস্টে—৪৮ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু অর্থপাচার, হুন্ডি ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি সেই রিজার্ভকে ক্রমেই নিঃশেষ করে দেয়।

নতুন সরকার, উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং সুশাসনের আশ্বাসে ফের আশাব্যঞ্জক অবস্থানে ফিরছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।