বাবা ও পিএস ইস্যুতে বিতর্কে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা:
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ৫:৫৯
বাবা ও পিএস ইস্যুতে বিতর্কে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সম্প্রতি দুটি বিতর্কিত ঘটনার কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। একদিকে তার শিক্ষক বাবার নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স ইস্যু, অন্যদিকে তার ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনের আকস্মিক পদত্যাগ জনমনে প্রশ্ন তুলেছে।

বাবার নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, উপদেষ্টার পিতা বিল্লাল হোসেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তালিকাভুক্ত ঠিকাদার হয়েছেন। তিনি ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ কুমিল্লা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত একটি লাইসেন্স কপিও প্রকাশ করেন।

প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ স্বীকার করেন, তার পিতার নামে লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে, তবে সেটি তার অজ্ঞাতসারে এবং স্থানীয় এক ঠিকাদারের প্ররোচনায়। তিনি দাবি করেন, এই লাইসেন্স ব্যবহার করে এখনো কোনো প্রকল্পের কাজ করা হয়নি।

এই ঘটনাকে ঘিরে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। সামাজিক মাধ্যমে এবং সংবাদমাধ্যমে এই ইস্যু নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

যদিও বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার পর ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তিনি।

ফেসবুকে আসিফের দেওয়া পোস্টটি তুলে দেওয়া হলো—

  প্রথমেই আমার বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। গতকাল রাত ৯ টার দিকে একজন সাংবাদিক কল দিয়ে আমার বাবার নামে ইস্যুকৃত ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলেন। বাবার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলাম তিনি জেলা পর্যায়ের (জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার এর কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত) একটি লাইসেন্স করেছেন। বিষয়টি উক্ত সাংবাদিককে নিশ্চিত করলাম। তিনি পোস্ট করলেন, নিউজও হলো গণমাধ্যমে। নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে তাই ব্যাখ্যা দেও য়ার প্রয়োজনবোধ করলাম।

আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বাবাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তার কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন।

রাষ্ট্রের যেকোনো ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যেকোন লাইসেন্স করতেই পারে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।

এপিএসের পদত্যাগ

অন্যদিকে, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সহকারী একান্ত সচিব মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে ৮ এপ্রিল অব্যাহতি দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে অব্যাহতির কারণ উল্লেখ না থাকলেও, মোয়াজ্জেম হোসেন সামাজিক মাধ্যমে জানান, তিনি নিজ ইচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন এবং এটি অপসারণ নয়।

তিনি জানান, সরকারি চাকরিতে স্থায়ী কোনো পদে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে পদত্যাগ করেছেন। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও এ বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জনআস্থা

এই দুটি ঘটনা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের চারপাশে নতুন করে বিতর্কের আবহ তৈরি করেছে। বিশেষ করে পিতার ঠিকাদারি লাইসেন্স ইস্যুতে প্রশাসনের অভ্যন্তরে স্বচ্ছতা, নিয়ম-নীতির প্রয়োগ ও স্বজনপ্রীতির প্রশ্ন সামনে এনেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন ঘটনা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো প্রশাসনের গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ ভূমিকা পালন করা এখন সময়ের দাবি।