ভারতের হামলায় নিহত ২৬, ভূপাতিত ৫ যুদ্ধবিমান: পাল্টা প্রস্তুতির হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের

পাকিস্তানি আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরি।
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। বুধবার (৭ মে) ভোরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পাকিস্তানি আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরি। দেশটির শীর্ষ দৈনিক দ্য ডন এ খবর প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের দাবি, ভারত ছয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে, যাতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪৬ জন। এর আগে অভিযানের প্রাথমিক পর্যায়ে নয়জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হওয়ার তথ্য প্রকাশ হয়েছিল। হামলায় ভাওয়ালপুর, কোটলি ও মুজাফফরবাদের বেশ কয়েকটি মসজিদ, বাড়িঘর ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাল্টা প্রতিরোধে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে বলেও দাবি করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান বলছে, তারা ‘সমুচিত জবাব’ দিতে প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে এর চেয়েও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভারতের এই সামরিক অভিযানের সূত্রপাত গত মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত সরকার এ ঘটনায় পাকিস্তান-সমর্থিত গোষ্ঠী জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
৭ মে স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায়, যার আওতায় পাকিস্তান এবং পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি স্থাপনায় আঘাত হানা হয়। তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এই হামলায় শুধুমাত্র ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ লক্ষ্যবস্তু ছিল, কোনো সামরিক স্থাপনায় হামলা হয়নি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুই দেশের মধ্যে এই সংঘর্ষে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান যেন সর্বোচ্চ সংযম দেখায় এবং অবিলম্বে উত্তেজনা নিরসনে সংলাপে বসে।’ তিনি এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগে জাতিসংঘের প্রস্তুতির কথাও জানান।
যুক্তরাষ্ট্র
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখার পক্ষে। ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা নজরদারিতে রয়েছে এবং পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে আমরা দ্বিপক্ষীয়ভাবে যোগাযোগ করছি।’ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ‘উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান’ জানিয়েছে।
চীন
চীন, যে কিনা পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র, এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘এ অঞ্চলে যে কোনো সামরিক উত্তেজনা শান্তির জন্য হুমকি।” চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা সংযম প্রদর্শন ও অবিলম্বে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
ইইউ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশকেই আমরা কূটনৈতিক সমাধানের পথ অনুসরণের আহ্বান জানাচ্ছি। বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত।’
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে উত্তেজনার জেরে পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ৮
আপনার মতামত লিখুন