মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবর ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’: ফারুক ই আজম

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ৪ জুন, ২০২৫, ১০:১৬
মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবর ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’: ফারুক ই আজম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং মুজিবনগর সরকারের এমএনএ ও এমপিএদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে—বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পর বিষয়টি ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’ বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।

বুধবার (৪ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা সঠিক নয়। এখানে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে—‘প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার)’। এই সরকারেই ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও খন্দকার মোশতাক আহমদ। তাঁরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা।”

সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। এতে ২০২২ সালের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের সংশোধন করে নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয় এবং কিছু ব্যক্তিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এরপর থেকেই প্রশ্ন ওঠে, মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক নেতা, এমএনএ-এমপিএ, এমনকি বঙ্গবন্ধুকেও কি শুধুমাত্র ‘সহযোগী’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে?

এই প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, “মুজিবনগর সরকার পুরো মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে। অস্ত্র, রসদ, রেশন—সবকিছু এই সরকার থেকেই সরবরাহ করা হয়েছে। সুতরাং, এই সরকারের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা না বলার কোনো সুযোগ নেই। এটা ঐতিহাসিক সত্য। কে রণাঙ্গনে লড়বে, কোথায় যাবে—এসব সিদ্ধান্ত এই সরকারই নিয়েছে।”

তিনি বলেন, “অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—সশস্ত্র বাহিনী, ইপিআর, পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) এবং উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।”

নতুন সংজ্ঞায় কারা মুক্তিযোদ্ধা:

১. যাঁরা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অথবা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন;
২. পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়াই করেছেন;
৩. সেনাবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ, আনসার, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স এবং মুজিবনগর সরকার ও তাদের স্বীকৃত বাহিনীর সদস্যরা;
৪. যুদ্ধকালীন নির্যাতিত নারী (বীরাঙ্গনা);
৫. মুক্তিযুদ্ধকালীন ফিল্ড হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারীরা।‘

মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ কারা:

যাঁরা সরাসরি রণাঙ্গনে ছিলেন না, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশ বা বিদেশে নানা ভূমিকা রেখেছেন, যেমন:

  • মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মচারী ও দূত;

  • এমএনএ বা এমপিএ (যাঁরা যুদ্ধ করেননি);

  • স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী;

  • মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংবাদিক;

  • স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়।

এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীদের ‘সহযোগী’ বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারকে নয়। নেতাদের—যেমন এমএনএ, এমপিএ—যদি কেউ যুদ্ধ করে থাকেন, তাহলে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত থাকবেন।”

তিনি আরও জানান, “এই শ্রেণিবিন্যাসে কোনো মর্যাদা হ্রাস করা হয়নি। বরং মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি অবদানকে স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধার জায়গা থেকেই বিবেচনা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেও কোনো বৈষম্য নেই।”

উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, যিনি নিজেও একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, বলেন, “যারা যুদ্ধ করেনি, তারা তো মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না। তবে তাদের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই—তাদের সম্মান জানাতে ‘সহযোগী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এটা মর্যাদার কমতি নয়, বরং স্পষ্টীকরণ।”