যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যকে হুমকি তেহরানের, জবাবে ‘তেহরান জ্বলবে’ হুশিয়ারি

বিশেষ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১৪ জুন, ২০২৫, ৩:৩৮
যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যকে হুমকি তেহরানের, জবাবে ‘তেহরান জ্বলবে’ হুশিয়ারি

ইসরায়েলের পাল্টা হামলা ঠেকাতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সামরিক ঘাঁটি ও যুদ্ধজাহাজে আঘাত হানার হুমকি দিয়েছে ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, তেহরান হুঁশিয়ার করে বলেছে—এই তিন দেশ ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিলে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ঘাঁটি ও সামরিক উপস্থিতি ইরানের লক্ষ্যবস্তু হবে।

এই হুমকির জবাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ত। তিনি বলেন, “ইরানের একনায়কতান্ত্রিক সরকার জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। ইসরায়েলের বেসামরিক জনগণের ওপর চালানো অপরাধমূলক হামলার জন্য তেহরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে। তেহরান জ্বলবে।”

শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান চালায়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করেছে তেহরান। যদিও যুক্তরাজ্য বলছে, তারা এখনো কোনো সরাসরি সামরিক সহায়তা দেয়নি এবং ইসরায়েলও আনুষ্ঠানিকভাবে সাহায্য চায়নি।

তবে অতীতে ইরানের ড্রোন প্রতিহত করতে সাইপ্রাস থেকে ব্রিটিশ টাইফুন জেট পাঠানো হয়েছিল।

জাতিসংঘে ইরানি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাসহ অন্তত ৭৮ জন নিহত ও ৩২০ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

ইসরায়েলের দুই দফা হামলার জবাবে শুক্রবার রাতে ইরানও শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পাল্টা আঘাত হানে। এতে ৪ ইসরায়েলি নিহত এবং আরও ৬৩ জন আহত হন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, তারা ইরানে নতুন করে হামলার জন্য প্রস্তুত। এখন পর্যন্ত তারা ১৫০টির বেশি স্থানে হামলা চালিয়েছে। এছাড়া দাবি করেছে, ইরানের পাঠানো অধিকাংশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ভূপাতিত করা হয়েছে।

আইডিএফ আরও জানিয়েছে, তাদের হামলায় ইরানের অন্তত ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ নিহত হয়েছেন। ইস্পাহান ও নাতাঞ্জের পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কথাও জানিয়েছে তারা।

ইরানের রাজধানী তেহরানে যুদ্ধের আশঙ্কায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। বিবিসির প্রতিবেদক রামিন মোস্তাকিম জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করতে দোকানে ভিড় করছেন। বাজারে অধিকাংশ পণ্যের তাক এখন ফাঁকা।

রাতভর বিস্ফোরণের শব্দে ঘুমহীন সময় পার করছে মানুষ। দিনের বেলায় রাস্তাঘাট ফাঁকা, ক্যাফে ও দোকানগুলোতে নেই আগের মতো জমজমাট পরিবেশ।

‘অস্তিত্বের লড়াই’ দেখছে ইরান

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, এই যুদ্ধ কতদিন চলবে তা নিশ্চিত নয়। একইসঙ্গে তিনি ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস ও দেশটির রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের আগ্রহের কথাও প্রকাশ করেছেন।

ইরান এই সংঘাতকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই বলে অভিহিত করছে। দেশটির সামরিক নেতারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের আক্রমণের জবাব দিতে তারা সর্বশক্তি প্রয়োগে প্রস্তুত।

ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ধারণা, ইরানের হাতে এখনো প্রায় ২ হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যা দিয়ে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানা হচ্ছে।

তবে ইরান সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাতে জড়াতে চায় না। কারণ তাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব জানেন, সামরিক কিংবা কূটনৈতিকভাবে ওই যুদ্ধে জয় পাওয়া সহজ হবে না।

তারপরও পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি এবং ইসরায়েলের আগ্রাসী মনোভাবের জবাবে ইরান এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সামরিক ঘাঁটিগুলোতেও হামলার হুমকি দিচ্ছে। এতে করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে এক ভয়াবহ সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।