কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় অনুমোদনহীন ১৫টি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে অবাধে পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো বৈধ লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন। সরকারি নজরদারির অভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অনিয়ম ও চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্য দিয়ে গড়ে তুলেছে এই বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা ব্যবসা।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, সম্প্রতি এক পরিদর্শন জরিপে দেখা গেছে, উখিয়ার কোনো ক্লিনিক, হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বৈধ লাইসেন্স আপডেট নেই। বিষয়টি জেলা টাস্কফোর্স কমিটিকে জানানো হয়েছে এবং আগামী মাস থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এসব প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত চার্জ, ভুল রিপোর্ট ও মানহীন চিকিৎসাসেবা নিয়মিতভাবে দেওয়া হচ্ছে। এক্স-রে থেকে শুরু করে বিভিন্ন ল্যাব টেস্টে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্টের অভাবে ভুল রিপোর্টে বিভ্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা।
গত ২৫ জুন জেলা সিভিল সার্জন অফিসের একটি পরিদর্শন দল উখিয়ার বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হঠাৎ পরিদর্শন চালায়। ডা. জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে এ দলে ছিলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাজেদুল ইমরান শাওন, ডা. আসাদ এবং উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নুরুল আলম। পরিদর্শনকালে কোটবাজার, কুতুপালং, পালংখালী ও মরিচ্যা এলাকায় থাকা ক্লিনিকগুলোর কেউই হালনাগাদ বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। কেবল কয়েকটি প্রতিষ্ঠান—যেমন: কোটবাজার অরিজিন হাসপাতাল, লাইফ কেয়ার, কুতুপালং পালং জেনারেল হাসপাতাল ও পালংখালী তাজমান হাসপাতাল—২০২৪-২৫ অর্থবছরের লাইসেন্স নবায়নের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাসরিন জেবিন বলেন, সিভিল সার্জনের নির্দেশে তদন্ত টিম মাঠে কাজ করেছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। দেখা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বা এখনো আবেদনই করেনি।
স্থানীয়দের দাবি, কিছু অসাধু হাসপাতাল-মালিক প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতায় মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠানে কার্যত সরকারের কোনো নজরদারি নেই।
জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের সমন্বয়ে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব অভিযানে লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান সিলগালা, জরিমানা ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
সাধারণ জনগণকে লাইসেন্সবিহীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়ার আগে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত হটলাইন বা জেলা স্বাস্থ্য কার্যালয়ে।
আপনার মতামত লিখুন