বরিশালের মাটিতে বেড়ে ওঠা সাইফ মাহমুদ জুয়েল শ্রম, মেধা, ত্যাগ আর দৃঢ় প্রত্যয়ের পথ পাড়ি দিয়ে রাজনীতির শীর্ষে পৌঁছেছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও রাজনৈতিক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে উঠে আসা এই তরুণ নেতা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১৯ সালে। তৃণমূল থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি এবং নানা দুঃসময় ও চার দফা কারাবরণ পার হয়ে জুয়েল আজ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে। শুধু তাই নয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জুয়েল বুক চিতিয়ে বুলেট আর বারুদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
তার রাজনৈতিক যাত্রা শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, বরং ছাত্র রাজনীতিতে আদর্শ, অধ্যবসায় ও ত্যাগের এক উদাহরণ।
২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির পঞ্চম রোডমার্চে ঝিনাইদহ জেলা বাস টার্মিনালে এক সমাবেশে সাইফ মাহমুদ জুয়েল ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানেই সরকারের পতন ঘটবে।’ মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই সেই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তব রূপ নেয়, বিদায় নেয় ফ্যাসিবাদ।
আলোচনার শুরুতেই ঝিনাইদহের সেই বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, আমি যখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসি তখন নতুন কমিটি মানেই মামলা, কখনও হামলা, আবার কখনও খুন কিংবা গুমের হুমকি। বিরোধী মত দমনের সবচেয়ে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সময়েও আমি তরুণদের মাঝে স্বাধীনতার যে ঐকান্তিকতা ও নবচেতনা দেখেছি, সেই সহযোদ্ধা তরুণরাই আসলে আমার ঝিনাইদহের বক্তব্যের প্রেরণায় ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ভিন্ন রাজনৈতিক মতের কারণেই আমাকে চারবার কারাগারে যেতে হয়েছে। এর পেছনে ছিল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন, মানুষের ভোটাধিকার ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। কারাবাসের সেই অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে আজও ডজনখানেক মামলা মাথার ওপর ঝুলছে। তবু সান্ত্বনা দেশ এখন ফ্যাসিবাদমুক্ত। আগামী প্রজন্মের জন্য গণতান্ত্রিক, সাম্য ও ঐক্যের বাংলাদেশ নির্মাণের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, সেখানে ক্ষুদ্রতম অংশীদার হতে পারাটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
সব লড়াই-সংগ্রাম পেরিয়ে এবার সরাসরি জাতীয় সংসদে জনতার প্রতিনিধিত্বের স্বপ্ন দেখছেন সাইফ মাহমুদ জুয়েল। দলের কেন্দ্র থেকেও এলাকায় সক্রিয়তার ইঙ্গিত ছিল। উজিরপুর ও বানারীপাড়া (বরিশাল – ২) আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনি।
রাজনীতিতে নিজের আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাইফ মাহমুদ জুয়েল কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার রাতে আমার জন্মস্থান শোলক ইউনিয়নে বিএনপির প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী আনন্দ মিছিল করেছিল। তারা জানত, এমন মিছিল তাঁদের বিপদে ফেলতে পারে। তবুও তারা আমাকে তাঁদের মানুষ মনে করে সেদিন মিছিল করেছিল। ধামুরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে যে তরুণরা তখন আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছিল, বা ২০১৬ সালে আমি ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই, সবই আমার দলের প্রতি দায়বদ্ধতার অংশ। আমার আদর্শের অনুপ্রেরণা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের নেতা তারেক রহমান। তাঁদের বিশ্বাসের ভিতেই আমাকে জুয়েল তৈরি করেছে। সেই বিশ্বাস ও আস্থার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি সংসদে জনতার প্রতিনিধিত্বের স্বপ্ন দেখছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের রাজনৈতিক আদর্শের মূল ভিত্তিই হলো মানুষ। আমি চাই, আমার অঞ্চলের গণমানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে জাতীয় সংসদে পৌঁছাতে।
তাহলে আপনার রাজনীতি ও দেশপ্রেমের ভিত্তি মানুষ ?
এ প্রশ্নে সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, দেখুন, ভূখণ্ড তো স্থির বিষয়। আসল দেশপ্রেম হল মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মানুষের কল্যাণে জয়গান করা। মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই দেশকে ভালোবাসা প্রকাশ পায়।
নিজের রাজনৈতিক আসন উজিরপুর ও বানারীপাড়া নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বরিশাল-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৮ হাজার ২৪৬ জন, যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮২ হাজার ৩৬৮ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭৭। নারী-পুরুষ ভোটারের সংখ্যা প্রায় সমান। আমার লক্ষ্য, কৃষিকে প্রাধান্য দেওয়া, শিক্ষাকে কর্মমুখী করা এবং স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বজনীন করা। এ বিষয়ে তরুণদের নিয়ে একটি বিশেষ টিম গঠন করেছি। এখন আমরা উজিরপুর ও বানারীপাড়ার সমস্যা শনাক্ত করছি, এরপর সমাধান ও সম্ভাব্য কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করব।
তিনি আরও বলেন, আমি পূর্বপুরুষদের মতো নির্ধারিত ছকে বাঁধা রাজনীতি করতে চাই না। আমরা প্রতিটি সম্ভাবনাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে চাই। এভাবেই আমরা উদার, সমৃদ্ধ ও সমতার ভিত্তিতে সমাজ গঠন করব, যা আমার অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
গুঞ্জন আছে আপনি নির্বাচনী প্রচারণায় যথেষ্ট দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন, এলাকায় যাচ্ছেন নিয়মিত ?
নির্বাচনী প্রচারণা প্রসঙ্গে জুয়েল বলেন, উজিরপুর ও বানারীপাড়া মানুষের সঙ্গে আমার নিয়মিত সংযোগ আছে। ফ্যাসিবাদের ভয়কে উপেক্ষা করেও আমি সবসময় তাদের পাশে ছিলাম। এখন তাঁরা চাচ্ছেন, আমি মাঠে থেকে তাদের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করি। এছাড়া আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর দেশনায়ক তারেক রহমানের আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা ‘৩১ দফা’ নিয়ে উজিরপুর ও বানারীপাড়ার বিভিন্ন পথসভা ও জনসভার মাধ্যমে এটি জনগণের কাছে পৌঁছে দেব।

