তিন দেশের ভিসা পেয়েছেন খালেদা জিয়া

8 Min Read
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।- ফাইল ছবি।

 

অনলাইন ডেস্ক । নিউজনেক্সটবিডি.কম

 

উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ সপ্তাহেই বিদেশের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। ইতোমধ্যেই তিনি সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এই তিন দেশের ভিসা পেয়েছেন।

 

সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার আগে বা পরে ওমরাহ করার জন্য সৌদি আরব যেতে পারেন। এ জন্য তিনি সৌদি আরবের ভিসা নিয়েছেন। তার আগেই তিনি লন্ডনের ভিসা নিয়েছেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ছেলে তারেক রহমানসহ স্বজনদের সঙ্গে কিছুদিন সময় কাটানো ও বিশ্রাম শেষে তিনি লিভারের জটিল চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। সে জন্য সম্প্রতি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে সেদেশের ভিসা সংগ্রহ করেছেন। শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে এ সপ্তাহের ১২ অথবা ১৩ তারিখ খালেদা জিয়া বিদেশের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়তে পারেন।

 

সূত্র মতে, খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার আগে ওমরাহ করতে সৌদি আরব গেলে লন্ডন থেকে তারেক রহমানও সৌদি আরব আসতে পারেন। আবার খালেদা জিয়া আগে লন্ডন গেলে তাঁর চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পথে তারেক রহমনসহ পরিবারের সদস্যরা সৌদি আরবে এসে ওমরাহ করতে পারেন। এ বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রাখা হয়েছে।

 

- Advertisement -

এদিকে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে দেখার অপেক্ষায় আছেন তাঁর ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পুরো পরিবার। যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরাও এ অপেক্ষায় আছেন। এ ছাড়া লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যেই চিকিৎসকদের আগে থেকে জানিয়ে রাখা হয়েছে তারাও তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানা যায়।

 

উল্লেখ্য, চিকিৎসার জন্য প্রথমে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হলেও সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মাল্টি ডিসেপ্ল্যানারি মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হবে। সেখানে তাঁর লিভারের জটিল চিকিৎসা করানো হবে।

- Advertisement -

 

খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাবেন বলেই বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ‘লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ ঠিক করে রাখা হয়। এ ছাড়া তাঁর চিকিৎসার কাজে সহযোগিতার জন্য মেডিক্যাল বোর্ডের ৭ চিকিৎসক এবং নার্স, সহকারী ও স্বজনসহ ১৬ জনের ভিসা করা হয়। যারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাওয়ার কথা তাদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের ৭ জন চিকিৎসক – অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, প্রফেসর ডা. শাহাবুদ্দিন, অধ্যাপক ডা. শামসুল আরেফিন, ডা. নূর উদ্দিন, প্রফেসর ডা. এফ এম সিদ্দিক, ডা. জাফর ও ডা. আল মামুন। এ ছাড়া ৩ জন নার্স। আরও যাওয়ার কথা ছিল প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথি, দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত গৃহকর্মী ফাতেমা ও রূপা।

 

৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে তাঁকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল বোর্ডের টিমে দেশের বেশক’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী কার্ডিওলস্টি ডা. জোবাইদা রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার ক’জন চিকিৎসকও রয়েছেন।

 

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার জটিল চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে এমন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বিদেশে পাঠানো হবে। সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে বিদেশের মাল্টি ডিসেপ্ল্যানারি মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হবে। প্রথমে ম্যাডামকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে যাত্রা বিরতির পর মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হবে।

 

২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বেশ ক’বার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। করোনাক্রান্ত হয়ে ওই বছর ১৫ এপ্রিল এক ঘণ্টার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো হয়। রিপোর্ট ভালো আসায় ওই দিন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো না আসায় ওই দিনই তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ৫৪ দিন পর খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় ১৯ জুন।

 

১১৫ দিন পর দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালে ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর শরীরের একটি অংশের চামড়া ফোসকার মতো (চাকা) হয়েছিল। এ জন্য ২৫ অক্টোবর এভার কেয়ার হাসপাতালে তাঁর বায়োপসি করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৭ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফেরেন ওই বছর ৭ নভেম্বর। এর পর ১৩ নভেম্বর আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৮১ দিন চিকিৎসা নেন তিনি। তখন হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই তিনি সিসিইউতে ছিলেন। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি তাঁকে সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হয়। ৮১ দিন হাসপাতালে থাকার পর ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গুলশানের বাসায় ফিরেন খালেদা জিয়া।

 

২০২২ সালের ৬ এপ্রিল এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, ইমেজিং, ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট, লিভার ফাংশন টেস্ট, কিডনি ফাংশন টেস্ট, হার্টের টেস্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করান খালেদা জিয়া। এরপর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা চিকিৎসা ব্যবস্থায় সামান্য পরিবর্তন আনেন। ১০ জুন রাত সোয়া ৩টায় বুকের ব্যথা নিয়ে চতুর্থ দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। ১১ জুন এনজিওগ্রামের পর তাঁর হার্টে ৩টি ব্লক ধরা পড়লে ওইদিনই একটি ব্লকে রিং পরানো হয়। পরদিন দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তাঁর হৃদপিন্ডে ৩টি ব্লক পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি ব্লকে রিং পরানো হয়। রিং পরানোর ক’দিন পর তাঁকে কেবিনে নেওয়া হয়। কেবিনে রেখেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা চালায় মেডিক্যাল বোর্ড। এভারকেয়ার হাসপাতালে টানা ১৪ দিন চিকিৎসা শেষে ২৪ জুন গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর পর ২২ আগস্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে পরীক্ষা শেষে রাতেই আবার বাসায় ফেরেন তিনি। এর পাঁচ দিন পর ২৭ আগষ্ট আবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার পর ৩১ আগস্ট তিনি বাসায় ফেরেন।

 

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের রাজকীয় আমন্ত্রণে সপরিবারে ওমরা পালন করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তখন লন্ডন থেকে তারেক রহমানও ওমরাহ করতে আসলে মা-ছেলের দেখা হয়। পরের বছর ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। ২ মাস সেখানে অবস্থান করে ১৮ই অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি। সেই সময় খালেদা জিয়া লন্ডনের ডা. হ্যাডলি ব্যারির অধীনে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তবে এবার লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলছেন। ১১ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশে ফিরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিদেশে তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

 

 

 

newsnextbd20
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *