ফ্রান্সের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত: সেপ্টেম্বরেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশ: ২৫ জুলাই, ২০২৫, ৯:০৪
ফ্রান্সের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত: সেপ্টেম্বরেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি

প্রথমবারের মতো শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-সেভেন–এর সদস্য রাষ্ট্র ফ্রান্স ঘোষণা দিয়েছে, তারা আসছে সেপ্টেম্বরেই ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বৃহস্পতিবার এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে জানান, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের নিউইয়র্ক অধিবেশনে তিনি এ ঘোষণা দেবেন।

মাখোঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘গাজায় যুদ্ধ অবসান, জিম্মিদের মুক্তি এবং ব্যাপক মানবিক সহায়তা এখন জরুরি। শান্তি সম্ভব। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, এর কার্যকারিতা ও নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে যে এটি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় এবং সবাইকে নিরাপত্তা দেয়। এর বিকল্প নেই।’

মাখোঁর ঘোষণার পরপরই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন তা স্বাগত জানায়।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছে পাঠানো এক চিঠিও মাখোঁ তার পোস্টে সংযুক্ত করেন। তার ডেপুটি হুসেইন আল-শেখ বলেন, এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতির বহিঃপ্রকাশ।

নেতানিয়াহুর কড়া প্রতিক্রিয়া

তবে ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এক্সে তিনি বলেন, “৭ অক্টোবর হামাসের বর্বর হামলার পর এই স্বীকৃতি সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করার সামিল। ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের পাশ নয়, বরং ইসরায়েলের জায়গায় একটি রাষ্ট্র চায়।”

নেতানিয়াহুর মতে, গাজা সীমান্তে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হলে তা হবে ইসরায়েল ধ্বংসের ‘লঞ্চ প্যাড’।

হামাস ও সৌদি আরবের প্রতিক্রিয়া

ফ্রান্সের সিদ্ধান্তকে ‘সঠিক দিকের ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে হামাস। তারা সব দেশকে ফ্রান্সের অনুসরণে আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ফ্রান্সের অবস্থান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐকমত্যকে প্রতিফলিত করে, যা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারে আস্থাশীল।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য স্পেন ও আয়ারল্যান্ড ইতোমধ্যে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো ইসরায়েলপন্থী দেশগুলো এখনও এমন ঘোষণা দেয়নি।

তবে নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার জানিয়েছেন, তিনি ফরাসি ও জার্মান নেতাদের সঙ্গে জরুরি আলোচনা করবেন। তার ভাষায়, রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের অবিচ্ছেদ্য অধিকার। যুদ্ধবিরতি আমাদের দুই-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে এগিয়ে নেবে।

মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জেরে ইসরায়েল গাজায় যে সামরিক অভিযান চালায়, তাতে প্রায় ১২০০ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়। এর পর থেকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় ৫৯ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং গাজা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) বৃহস্পতিবার জানায়, গাজা শহরের প্রতি পাঁচজন শিশুর একজন অপুষ্টিতে ভুগছে এবং তা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। ১০০টিরও বেশি মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থা গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এবং বিশ্বনেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েল অবশ্য গাজায় কোনো অবরোধের কথা অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে, অপুষ্টির জন্য হামাসই দায়ী।