সীমান্তে বাংলাদেশ পুলিশের বাড়তি সতর্কতা

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনার ছায়া বাংলাদেশে যেন না পড়ে, সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তৎপর অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের ৩২টি সীমান্ত জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনার আওতায় অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং গুজব প্রতিরোধে জোর নজরদারি চালানো হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি ও অন্যান্য অপরাধীদের যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাতে কেউ ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে ঘিরে গুজব বা উসকানিমূলক তথ্য ছড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সেজন্য পুলিশের সাইবার ইউনিটকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে।
আইজিপি বাহারুল আলম জানান, সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগেভাগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। “আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব যেন এই সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়,” বলেন তিনি।
সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনে সক্রিয় রয়েছে। জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগ এই বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে। সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তারা স্থানীয় পর্যায়ে থানা পুলিশকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বলেছে এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
মাঠপর্যায়ে প্রস্তুতি ও সমন্বয়
যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, সিলেট, ময়মনসিংহসহ সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি এবং থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করেছেন। এসব সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে—কোনো ধরনের গুজব, অপপ্রচার বা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহান জানান, সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত সব থানাকে সচেতন থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এসপি রেজাউল করিম বলেন, সীমান্তবর্তী চারটি থানা এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
খাগড়াছড়ির এসপি মো. আরেফিন জুয়েল জানান, বিজিবি, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করছে। ফেসবুক বা অন্যান্য মাধ্যমে কোনো গুজব নজরে এলে দ্রুত সত্য তুলে ধরা হচ্ছে। একই ধরনের মত দিয়েছেন কুমিল্লা ও সিলেট জেলার পুলিশ সুপাররাও।
ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, “ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে কেউ যাতে উসকানি বা বিদ্বেষমূলক কিছু না ছড়ায়, সে বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কড়া নজর রাখা হচ্ছে।”
সীমান্তবর্তী বিভাগ ও জেলাগুলোর প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ঢাকা ও বরিশাল ছাড়া বাকি ছয় বিভাগের ৩২টি জেলার সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। ভারতের সঙ্গে ৩০টি জেলার এবং মিয়ানমারের সঙ্গে কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটির সীমান্ত রয়েছে। রাঙামাটির একটি অংশ ভারতের সাথেও সংযুক্ত, যা পরিস্থিতিকে আরো স্পর্শকাতর করে তুলেছে।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করা ৬৬ ভারতীয় নাগরিককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে তাদের আটক করা হয়।
বিজিবি সূত্র জানায়, মাটিরাঙ্গার গোমতি ইউনিয়নের শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে ২৭ জন, তাইন্দং সীমান্ত দিয়ে ১৫ জন এবং পানছড়ির লোগাং ইউনিয়নের রুপসেন পাড়া সীমান্ত দিয়ে ২৪ জনকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে পুশইন করা হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের সবাই ভারতীয় নাগরিক এবং তারা নিজেদের গুজরাটের বাসিন্দা বলে দাবি করেছেন।
বিশেষভাবে, শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা ২৭ জন গোমতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আবুল হোসেনের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে বিজিবির একটি টহল দল সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। অন্যদিকে, তাইন্দং বাজার থেকে বিজিবি সদস্যরা আটক করে আরও ১৫ জন ভারতীয় নাগরিককে।
আপনার মতামত লিখুন