আজহারের খালাস বিচার বিভাগের নয়, রাজনীতির রায়: অধিকার কমিটি

চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারকে আপিল বিভাগের পুনর্বিবেচনায় বেকসুর খালাস দেওয়ার রায়কে ‘ন্যায়বিচারের প্রহসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। সংগঠনটির মতে, এ রায় বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থানেরই প্রতিফলন।
আজ শুক্রবার (৩০ মে) এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। কমিটির পক্ষে বিবৃতিটি পাঠান অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, হারুন উর রশীদ, সীমা দত্ত, সামিনা লুৎফা, আবদুল্লাহ আল ক্বাফী, ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, মাহা মির্জা, আফজাল হোসেইন ও মারজিয়া প্রভা।
বিবৃতিতে বলা হয়, “১৯৭১ সালে এ টি এম আজহার রংপুরে ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে গণহত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি জড়িত ছিলেন। অথচ আপিল বিভাগ তাঁকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করে খালাস দিয়েছে, যা ন্যায়বিচারের চরম অবমূল্যায়ন এবং রাজনৈতিক প্রভাবের স্পষ্ট উদাহরণ।”
কমিটি অভিযোগ করে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শুরু থেকেই যুদ্ধাপরাধ বিচারে মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ না করে দলীয় কাঠামোর বদলে শুধুমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ে বিচার করেছে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আশ্চর্যের বিষয় হলো, অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছে, অন্যদিকে সেই ত্রুটিপূর্ণ কাঠামোতেই পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে। এতে স্পষ্ট হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় স্বার্থরক্ষার ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকারও জামায়াতের স্বার্থ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখছে।”
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির দাবি, মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ রয়েছে। কারণ, বর্তমান প্রসিকিউটরদের কেউ কেউ পূর্বে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া, বর্তমান প্রসিকিউশন আগের ত্রুটিগুলো সংশোধন না করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে, যা বিচারিক প্রক্রিয়াকে আরও দুর্বল করেছে।
কমিটির ভাষ্য, “এমন পরিস্থিতিতে খালাসের রায় ন্যায়বিচার নয়, বরং রাজনৈতিক সমঝোতার ফসল। এই রায় ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে’ উদ্ভূত ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী এবং একইসঙ্গে সেই গণহত্যার বিচারের পথকেও রুদ্ধ করছে।”
বিবৃতির শেষে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি দাবি করে, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাঠামোগত ত্রুটি অবিলম্বে সংশোধন করে দলীয়ভাবে সংঘটিত গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলাকারী ছাত্রশিবির সদস্যদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
আপনার মতামত লিখুন