ইরানে ইসরায়েলি হামলা উসকানিমূলক ও অগ্রহণযোগ্য: রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
প্রকাশ: ১৪ জুন, ২০২৫, ২:২৬
ইরানে ইসরায়েলি হামলা উসকানিমূলক ও অগ্রহণযোগ্য: রাশিয়া

ইরানে ইসরায়েলি বিমান হামলাকে উসকানিমূলক ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়া। মস্কো জানিয়েছে, বিনাদোষে এই হামলা চালানো হয়েছে, যা জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সেই সঙ্গে রাশিয়া অভিযোগ করেছে, পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও আতঙ্ক ছড়াতে ভূমিকা রাখছে। খবর রয়টার্স।

রাশিয়ার মতে, ইসরায়েলের এই আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ও উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলছে। এতে করে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে চলমান পরমাণু স্বচ্ছতা ও আলোচনার প্রচেষ্টাও বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে জানায় ক্রেমলিন।

শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েল দাবি করে, তারা ইরানে কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং সামরিক কমান্ড কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি ভাষ্য অনুযায়ী, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, মস্কো এই হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং নিন্দা জানাচ্ছে। তিনি বলেন, পুতিন এই পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

মস্কো মনে করে, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের চলমান উদ্বেগ দূর করতে হলে কূটনীতি ও আলোচনাই একমাত্র পথ। রাশিয়া সকল পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের এবং মধ্যপ্রাচ্যকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে ঠেলে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র আগে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হ্রাস এবং তা বেসামরিক জ্বালানিতে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছিল, যা তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আস্থার ভিত্তি তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারত।

রাশিয়া আরও জানায়, ইরানের সঙ্গে তাদের সাম্প্রতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলেও কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিতে পারস্পরিক সামরিক প্রতিরক্ষার কোনো শর্ত অন্তর্ভুক্ত নেই। গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিস্তারিত বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর এই আচরণ আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। নিরীহ মানুষ, শান্তিপূর্ণ শহর এবং পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও মানবতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, আগামী রোববার (১৫ জুন) ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, শুক্রবার ভোররাতে তেহরানে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ও সামরিক কমান্ড পোস্ট।

তেহরানে এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সৌদি আরব, তুরস্কসহ একাধিক দেশ ইতোমধ্যে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

টাইমস অব ইসরায়েলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ইরানে মোসাদ এজেন্টদের মাধ্যমে একটি গোপন ড্রোন ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছিল। সেখান থেকে পরিচালিত ড্রোন হামলার মাধ্যমে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বড় অংশ ধ্বংস করে দেওয়া হয়, যাতে তারা পাল্টা হামলা চালাতে না পারে।

তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড পরিচালিত নিউজ এজেন্সি ফার্সের তথ্যমতে, হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত এবং ৩২৯ জন আহত হয়েছেন। তবে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।