ইরানে মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা এরদোয়ানের, মধ্যস্থতায় প্রস্তুত তুরস্ক

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ২৩ জুন ২০২৫। - ডেইলি সাবাহ
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ইরানের ওপর যেকোনো ধরনের আগ্রাসনকেই তুরস্ক সমর্থন করে না, তা যেখান থেকেই আসুক। তিনি বলেন, আঙ্কারা চায় না ইরানকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের হামলা আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিক।
সোমবার (২৩ জুন) আঙ্কারায় একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে এরদোয়ান এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তুরস্ক কখনোই ইরানের সার্বভৌমত্ব বা আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর হামলার পক্ষে নয়। এটি আমরা সব সময় স্পষ্টভাবে বলেছি।
প্রসঙ্গত, রোববার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ এবং ইস্পাহানে অবস্থিত তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। জুন মাসের মাঝামাঝি শুরু হওয়া ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের এটি একটি বড় ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এরদোয়ান জানান, তুরস্ক এই উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালনে প্রস্তুত রয়েছে। গত শনিবার ইস্তাম্বুলে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে এক বৈঠকে এরদোয়ান ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তিগত ও নেতৃত্ব পর্যায়ে সংলাপের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই অঞ্চল আরেকটি যুদ্ধ সহ্য করতে পারবে না। ইসরায়েলকে এখনই থামাতে হবে।
ইসরায়েল সোমবার জানায়, তারা তেহরানে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে একটি ছিল শহরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি কারাগারে। টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, ওই কারাগারে বন্দিদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করতেই এ হামলা চালানো হয়।
এই ঘটনার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান মধ্য ও উত্তর ইসরায়েলে একযোগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এতে দুই দেশের মধ্যে চলমান আকাশযুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২৫ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে। অপরদিকে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় দেশটিতে অন্তত ৪৩০ জন নিহত এবং ৩,৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
তুরস্কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার
এরদোয়ান জানান, ৮৬ মিলিয়ন তুর্কি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তার সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। গত সপ্তাহেই তুরস্কের পক্ষ থেকে দেশীয় প্রযুক্তিতে মধ্য ও দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক আপাতত উত্তেজনাপূর্ণ হলেও, ন্যাটোভুক্ত তুরস্কে এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম।
তুরস্ক ইরানের আত্মরক্ষার অধিকারকে বৈধ বলেও উল্লেখ করেছে। এক সময় সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নিলেও, ২০২৩ সালের গাজা যুদ্ধের পর থেকে এরদোয়ান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অন্যতম কট্টর সমালোচকে পরিণত হন।
সিরিয়া ইস্যুতেও দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। যদিও চলতি বছরের শুরুতে উভয় দেশ সিরিয়ায় সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে ‘ডি-এস্কেলেশন মেকানিজম’ চালু করে।
আপনার মতামত লিখুন