ইসিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের চিঠি, তফসিল ডিসেম্বরে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশ: ৬ আগস্ট, ২০২৫, ৪:৩৬
ইসিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের চিঠি, তফসিল ডিসেম্বরে

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। বুধবার (৬ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিবের কাছে এই চিঠি পাঠান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি গ্রহণে ইসিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ চিঠির মধ্য দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন আয়োজনের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ সম্পন্ন হলো।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ‘গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়ার কথা জানান। তার পরদিনই এই চিঠি পাঠানো হলো।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিগত ১৫ বছর ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত নাগরিকদের সামনে এবার যেন নির্বাচন একটি আনন্দঘন, উৎসবমুখর দিন হিসেবে আসে—সেই প্রত্যাশা রেখেছেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু এবং সর্বজনগ্রাহ্য হয়, সে লক্ষ্যে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাসও দেয়া হয়েছে।

সিইসি: ফেব্রুয়ারির ভোটের প্রস্তুতি চলছে, তফসিল ডিসেম্বরে

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পরদিন, বুধবার দুপুরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে এবং ভোটের তারিখ ঘোষণার দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে।

সিইসি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন আমাদের দ্রুত চিঠি পাঠাবেন। আমরা ধরে নিচ্ছি, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। সেই অনুযায়ী আমরা আগেই প্রস্তুতি শুরু করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনী পরিবেশ এখন অনেক ভালো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা, রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন এবং ব্যাপক ভোটার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গড়ার প্রতিশ্রুতি

নির্বাচন কমিশন সকল দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে কাজ করছে জানিয়ে সিইসি বলেন, “খেলার মাঠ সবার জন্য সমান করতে আমরা সচেষ্ট। কিন্তু যারা খেলবেন, তাদেরও দায়িত্ব আছে। রেফারি একা সব কিছু সামলাতে পারে না—সব দলের সহযোগিতা চাই।”

তিনি আরও বলেন, “যারা নির্বাচনে আসবেন, তারা যেন নিয়ম মেনে, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন কমিশন ট্রান্সপারেন্ট ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।”

ভোটার তালিকা ও প্রস্তুতি

সিইসি জানান, ৩১ আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তিতে একটি অতিরিক্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে তফসিল ঘোষণার আগে।

তিনি বলেন, “ভোটে সম্পৃক্ত প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি চলছে। পোস্টাল ব্যালটের আওতায় এবার আরও বেশি সংখ্যক ভোটারকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।”

এআই অপব্যবহার প্রতিরোধ

এআই-এর অপব্যবহার রোধে কমিশন কাজ করছে জানিয়ে সিইসি বলেন, “নির্বাচনকে সবার জন্য উন্মুক্ত ও গ্রহণযোগ্য রাখতে আমরা যতটা সম্ভব স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাই। মানুষ ও বিশ্ববাসী দেখুক—আমাদের কোনো কিছু গোপন নেই।”

তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে আমাদের কার্যক্রম দেখে জনগণের আস্থা ফিরবে। আমরা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে কাজ করছি না। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনেই আমাদের মনোযোগ।”