এখনও ডিএসসিসিতে অচলাবস্থা, ১০ দিন ধরে বন্ধ কার্যক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ২৫ মে, ২০২৫, ৮:৩২
এখনও ডিএসসিসিতে অচলাবস্থা, ১০ দিন ধরে বন্ধ কার্যক্রম

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছে সংস্থাটির কর্মচারী ইউনিয়ন ও ইশরাক সমর্থকরা। আজ রবিবার টানা ১০ম দিনের মতো নগর ভবনের ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ডিএসসিসির সব কার্যক্রম।

সকাল ১০টার পর থেকেই নগর ভবন প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন ডিএসসিসির কর্মচারীরা। তারা ‘মেয়র ছাড়া নগর ভবন চলবে না’ স্লোগান দিয়ে ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। আন্দোলনকারীরা বলছেন, সরকারের উচিত আদালতের রায় অনুসারে দ্রুত শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন করা।

কর্মচারী হোসেন বলেন, “আমরা চাই, আদালতের রায় বাস্তবায়ন করে ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়িয়ে মেয়রের চেয়ারে বসানো হোক। তিনি দায়িত্ব না নিলে আমরা এখান থেকে বাড়ি ফিরব না।”

আন্দোলনের কারণে নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে আন্দোলনকারীদের একজন, আবদুল কাইয়ুম বলেন, “আমরা কারও সেবা বন্ধ করিনি। যারা রায় বাস্তবায়ন করছে না, তারাই ভোগান্তির জন্য দায়ী।”

ডিএসসিসির আরেক কর্মচারী আফরোজ হক বলেন, “এটা শুধু আমাদের দাবি নয়, পুরো ঢাকাবাসীর দাবি। সরকার আদালতের রায় অনুসারে শপথ করালেই আমরা কাজে ফিরব।”

এদিকে, নগর ভবনের মূল প্রবেশপথসহ অন্যান্য ফটকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। সেবাপ্রার্থীরা ভেতরে ঢুকতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। ডিএসসিসির অঞ্চল-১ ও অঞ্চল-৪-এর কার্যালয়সহ নগর ভবনের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

ওয়ারী থেকে আসা একজন নাগরিক বলেন, “মেয়ের জন্মনিবন্ধনের একটি ছোট্ট সংশোধনের জন্য কয়েকদিন ধরে ঘুরছি। অফিস খোলা থাকছে না, কাজও হচ্ছে না।”

জানা গেছে, গত ১৫ মে থেকেই নগর ভবনে অবস্থিত স্থানীয় সরকার বিভাগ অফিসও বন্ধ রয়েছে। বিভাগটির উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়াও অফিসে ঢুকতে পারছেন না।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন মামলা করেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত ২৭ মার্চ আদালত ফজলে নূর তাপসের জয় বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে।

তবে ১৪ মে ইশরাকের শপথ ঠেকাতে একটি রিট করেন আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ। সেটি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২৩ মে খারিজ করে দেয়। এরপরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনি জটিলতার কথা বলে শপথ অনুষ্ঠান স্থগিত রাখে।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইশরাক হোসেন এক ফেসবুক পোস্টে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও কর্মকর্তা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী জানিয়েছেন, আদালতের রায়ের কপি পেয়েছেন এবং ২৬ মে’র মধ্যে শপথ গ্রহণ করানোর আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল সোমবার ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।