কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনভূমির গিলে খাচ্ছে করাতকল, নীরব বনবিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার:
প্রকাশ: ২২ মে, ২০২৫, ৬:৪১
কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনভূমির গিলে খাচ্ছে করাতকল, নীরব বনবিভাগ

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের রাজারকুল রেঞ্জের আপাররেজু বিট ও দারিয়ার দীঘি বনবিট এলাকায় অবৈধ করাতকলের দৌরাত্ম্যে ধ্বংস হচ্ছে সংরক্ষিত বনভূমির গাছপালা। ২০১২ সালের করাতকল লাইসেন্স বিধিমালায় স্পষ্ট বলা থাকলেও সংরক্ষিত বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো করাতকল স্থাপন করা যাবে না, তা সম্পূর্ণ উপেক্ষিত।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা এসব অবৈধ করাতকলে প্রতিদিন চিরাই হচ্ছে মেহগনি, সেগুন, গর্জন, বইলাম, জারুলসহ মূল্যবান কাঠ। অধিকাংশ করাতকলের নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা বন বিভাগের লাইসেন্স। চলাচল করছে অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগে। এসব করাতকলের আশপাশেই রয়েছে সংরক্ষিত বনভূমি, যা আইন অনুযায়ী রক্ষার দায়িত্ব বন বিভাগের, কিন্তু সেখানে দেখা যায় প্রশাসনিক নীরবতা।

বিশেষ করে রাজারকুল রেঞ্জের আপাররেজু বিট কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনের দায়িত্বের এলাকায় অবাধে চলছে কাঠ চিরাই। শাহাবুদ্দিন নামে এক করাতকল মালিকের স্থানে বইলাম কাঠ উদ্ধার করা হলেও, অজ্ঞাত কারণে করা হয়নি কোনো মামলা।

গত ২২ মার্চ রাজারকুল রেঞ্জের দায়িত্বরত সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) অভিউজ্জামান নিজেই শাহাবুদ্দিনের করাতকল থেকে প্রায় ৬০ ঘনফুট গর্জন ও জাম কাঠ উদ্ধার করেন। কিন্তু এ করাতকলেরও নেই কোনো লাইসেন্স বা পরিবেশ ছাড়পত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব করাতকলের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র ও কিছু অসাধু বন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা। করাতকল মালিকদের ভাষ্যমতে, প্রতি মাসে রেঞ্জ অফিস, বিট কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করতে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। তারা জানান, লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলেও তা “বাধাপ্রাপ্ত” হয় কিন্তু কাঠ চিরাই বন্ধ হয় না।

দারিয়ার দীঘি মৌলভীবাজার, দারিয়ার দীঘি চিতাখোলা, কালোর দোকান, এসব এলাকায় অবৈধ করাতকলে দেখা গেছে শত শত ঘনফুট কাঠের মজুদ। দিনের আলোতেই কাঠ চিরাই চলে প্রকাশ্যে, অথচ বনবিভাগ কার্যত নিশ্চুপ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজারকুল রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক অভিউজ্জামান বলেন, “করাতকল উচ্ছেদ অভিযান শীঘ্রই শুরু করব।” এরপরই তিনি কল কেটে দেন।

বন রক্ষার নামে সরকারের কোটি টাকার প্রকল্প চললেও মাঠে বাস্তবতা ভিন্ন। প্রশ্ন উঠছে সংরক্ষিত বনভূমির চারপাশে কীভাবে গড়ে উঠল এসব করাতকল? আর কী কারণে এত কাঠ উদ্ধার হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না বনবিভাগ?