কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ অফিসে সীমাহীন দুর্নীতি, দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য

By বিশেষ প্রতিনিধি:

3 Min Read

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলও) শাখা আবারও অনিয়ম–দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, কমিশন ও ঘুষ ছাড়া ফাইলের কাজ এগোয় না। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পেতে মাসের পর মাস দৌড়ঝাঁপ করেও সুরাহা মেলে না, অথচ দালালদের মাধ্যমে কাজ করলে অল্প সময়েই চেক হাতে চলে আসে।

ভুক্তভোগীরা জানান, দালাল সিন্ডিকেটকে দিতে হয় ক্ষতিপূরণের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন। এলও–২ শাখার অফিস সহকারী ফাওয়াজ মোহাম্মদ রিমন, সাবেক সার্ভেয়ার বাকীরুল ইসলাম ও দালাল রনির নেতৃত্বে এ চক্র সক্রিয়। কমিশনে রাজি না হলে ফাইল গায়েব করা, ছিঁড়ে ফেলা কিংবা বছরের পর বছর আটকে রাখার হুমকি দেওয়া হয়।

মহেশখালী উপজেলার ঝাপুয়া মৌজার বিএস ১৪৭ খতিয়ানের ১.২০ একর জমির প্রকৃত মালিক ছিলেন ছৈয়দ আহমদ। মৃত্যুর পর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, দুই পুত্র মাহবুব আলম ও আব্দুল মজিদ এবং কন্যা রেহেনা বেগম উত্তরাধিকারী হন। ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে চার দফা শুনানিতে তাদের পক্ষেই চেক প্রদানের আদেশ হয়। শেষ শুনানি হয় ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমদের নির্দেশে অধিগ্রহণ শাখা ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৩ টাকার চেক হস্তান্তর করে।

অভিযোগ উঠেছে, চেক পাওয়ার পর প্রতিপক্ষরা এলও কর্মকর্তা এটিএম আরিফকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার নোটিশ আনিয়ে নেয়। ভুক্তভোগীদের মতে, এটি কর্মকর্তার দ্বিমুখী ঘুষ বাণিজ্যের স্পষ্ট প্রমাণ। বিএস ১৪৭ খতিয়ানে মোট জমির পরিমাণ ৩.৬৯ একর হলেও একাধিক মালিক পূর্ণ ক্ষতিপূরণ তুলে নিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, এলও শাখায় কাজ পেতে হলে প্রথমেই যেতে হয় কর্মকর্তা এটিএম আরিফের নিয়োগ করা দালালদের কাছে। তাদের নির্ধারিত কমিশন না দিলে ফাইল অগ্রসর হয় না। অফিসের ভেতর–বাইরে সক্রিয় এসব দালাল চক্রের সহযোগিতা ছাড়া ক্ষতিপূরণের অর্থ তোলা প্রায় অসম্ভব।

একাধিক পরিবার এ ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছে। সাবেক সার্ভেয়ার বাকীরুল ইসলামও স্বীকার করেছেন যে রিমন ও রনির হাত ধরে ফাইল জমা হয়েছে। তবে অনিয়মের অভিযোগে রিমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন।

এলও-২ ও এলও-৩ শাখার এলও কর্মকর্তা এটিএম আরিফ কল দিলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমদকে ফোন দিলে বার্তা দিয়েও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, আমাকে সব তথ্য দিলে আমি ব্যবস্থা নিব।

newsnextbd20
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *