‘কবরের কাছে গিয়ে আমার দুই বছরের মেয়ে বলে, বাবা আসো’

তামিম ইকবাল রাজু, ববি প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২২ মে, ২০২৫, ৩:৩৭
‘কবরের কাছে গিয়ে আমার দুই বছরের মেয়ে বলে, বাবা আসো’

“আমি যদি শহীদ হয়ে যাই, আমার মেয়ে গর্ব করে বলবে ‘আমার বাবা দেশের জন্য শহীদ হয়েছে’। কিন্তু আজ যদি ছাত্ররা ঘরে ফিরে যায়, তাহলে আমিও ঘরে থাকতে পারব না…। ওই যে ঘুম পাড়িয়ে মেয়েটাকে রেখে বাবা চলে গেলেন, আর দেখা হলো না…।”

শব্দগুলো যেন তীরের মতো বিদ্ধ করছিল শ্রোতাদের হৃদয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কীর্তনখোলা হলে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এই মর্মন্তুদ কথাগুলো বলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরিফুর রহমানের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার।  বৃহস্পতিবার (২২ মে) জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটরের অফিস (UNRCO) ও হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (HRSS) যৌথ আয়োজনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য রাখেন।

সোনিয়া বলেন, “আমার মেয়েটা এখনো কিছু বোঝে না। কিন্তু কবরের কাছে গিয়ে ডাকে— ‘বাবা আসো!’ আমি জিজ্ঞেস করি, ‘ওখানে কী করে তোমার বাবা?’ তখন বলে, ‘আল্লাহ দেয় আমার বাবা’। ওর বয়স মাত্র দুই বছর। আমাদের অপরাধটা কী ছিল? আমরা শুধু ন্যায্য কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলাম।”

তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হয়, ভবিষ্যতে ‘শহীদ’ শব্দটির আর কোনো মূল্য থাকবে না। আমার সন্তান কীভাবে মনে রাখবে তার বাবাকে? যেন অন্তত আমার মেয়ে গর্ব করে বলতে পারে, তার বাবা দেশের জন্য লড়াই করেছিলেন। এই আন্দোলন, এই গণহত্যা কেউ যেন ভুলে না যায়। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের একসাথে দাঁড়াতেই হবে।”

আরেক শহীদের ভাইয়ের আর্তি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত সুমন সিকদারের ভাই শামীম সিকদার বলেন, “গত ২৯ জুলাই বাড্ডার নতুন বাজার বাঁশতলায় আমার ভাই শহীদ হয়। সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হয়, তারপর গুলি লাগে সকাল ১১টার দিকে। সঙ্গে থাকা দুইজনও গুলিবিদ্ধ হয়। আমার ভাইয়ের শরীরে গুলি লাগার পর আর বাঁচানো যায়নি।”

শামীম বলেন, “ওখানে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, ভাইয়া ঘটনাস্থলেই মারা যান। যারা ছিল তারা আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, ‘আপনার ভাইয়ের গায়ে গুলি লেগেছে।’ সেই ফোনটা আজো কানে বাজে।”

সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুস্মিতা রায়।

সেমিনারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবার, শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা এই গণঅভ্যুত্থানকে “স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের চেতনার আগুন” হিসেবে উল্লেখ করেন।