কিশোরগঞ্জে ব্যাংকে রহস্যজনক ঘটনা, ছয় কর্মকর্তা হাসপাতালে

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংকের একটি উপশাখায় রহস্যজনক ঘটনায় ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে অচেতন হয়ে পড়েছেন। রবিবার (১ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাটি ঘটে কুলিয়ারচর থানার হাবিব কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত উপশাখায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব মথরামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে আল আমিন মিয়া একটি হিসাব খোলার জন্য ব্যাংকে গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যান। প্রায় ২০ মিনিট পর ফিরে এসে তিনি দেখেন, ব্যাংকের ভেতরে কেউ চেয়ারে বসে নেই—সবাই মেঝেতে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। অনেকের মুখে বমি। ব্যাংকের ভেতরে তীব্র তিক্ত গন্ধ ছড়িয়ে ছিল।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যাংকে ছুটে যান। ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুস সাকিব জানান, ব্যাংকের ভল্ট ও ক্যাশবাক্স সুরক্ষিত রয়েছে। তবে ভেতরে বিষাক্ত রাসায়নিকের তীব্র গন্ধ পাওয়া গেছে। সম্ভবত কোনো বিষাক্ত গ্যাস বা চেতনানাশক ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
অচেতন হয়ে পড়া ছয়জনই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের মধ্যে শাখা ব্যবস্থাপক সৌমিক জামান খান ও নিরাপত্তাকর্মী কামাল হোসেনকে প্রাথমিকভাবে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকি চারজনকেও প্রথমে সেখানেই ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকেরা জানান, চেতনানাশক বা কোনো অজানা রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে তারা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আদনান আক্তার বলেন, “শাখা ব্যবস্থাপক কিছুটা জ্ঞান ফিরে পেলেও স্বাভাবিক কথা বলতে পারছিলেন না। বমির উপসর্গ ছিল স্পষ্ট।”
স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল ইসলাম জানান, তিনি হুসনে আরা নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন হুসনে আরা কিছুটা সচেতন ছিলেন, তবে অস্থিরতা এবং অসংলগ্ন আচরণ করছিলেন।
ঘটনার পর ব্যাংকের দিনভর লেনদেন স্থগিত রাখা হয় এবং নিরাপত্তার স্বার্থে শাখাটি তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। ব্যাংকের মূল শাখা থেকে কর্মকর্তারা এসে শাখাটির নিয়ন্ত্রণ নেন।
কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিহা ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কেউ হয়তো চেতনানাশক জাতীয় কিছু ব্যবহার করেছে। তবে ডাকাতির চেষ্টা ছিল কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অসুস্থরা পুরোপুরি জ্ঞান ফেরালে এবং তদন্ত শেষ হলে পরিষ্কার ধারণা মিলবে।”
স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন