ক্রেতা সংকটে হতাশ যশোরের ক্ষুদ্র ও মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে চরম হতাশায় পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। ঈদ-পরবর্তী হাটে চাহিদার তুলনায় ক্রেতা কম থাকায় জমে ওঠেনি বাজার, বাড়েনি দাম। এতে করে মাঠ পর্যায় থেকে বেশি দামে কেনা চামড়া অবশেষে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা।
শনিবার (১৪ জুন) কোরবানির ঈদ-পরবর্তী দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে বড় হাটে প্রায় ২০ হাজার গরুর চামড়া এবং কয়েক হাজার ছাগলের চামড়া আমদানি হয়। হাটে প্রায় দেড় কোটি টাকার চামড়ার লেনদেন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে দাম না ওঠায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
রাজারহাট ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চামড়া নিয়ে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্থানীয় যানবাহনে করে হাটে হাজির হয়েছেন। চামড়া স্তুপ করে রাখা হলেও তা কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাননি পাইকাররা।
কেশবপুরের সাগরদাঁড়ি থেকে ৩০০ পিস গরুর চামড়া নিয়ে আসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পুলিন দাস। তিনি জানান, দেড়শ পিস চামড়া সাড়ে ৭০০ টাকা করে বিক্রি করতে হয়েছে, অথচ প্রতিটি চামড়ার খরচ পড়েছে হাজার টাকার ওপরে। ফলে প্রতি পিসে আড়াইশ টাকা করে লোকসান গুনতে হয়েছে। বাকি দেড়শ চামড়ার দাম কেউ ৪০০-৫০০ টাকার বেশি বলছে না।
তিনি আরও জানান, মাঠ পর্যায়ে সরকার ঘোষিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনতে হয়েছে। অথচ এখন সেই দামে বিক্রি করতে পারছেন না। সরকার দাম নির্ধারণ করলেও বাস্তবে সেই দাম কার্যকর হয়নি।
নড়াইলের লোহাগড়া থেকে চামড়া নিয়ে আসা ব্যবসায়ী শুভ বিশ্বাস জানান, ১০২টি উন্নতমানের চামড়া এনেছেন তিনি। প্রতি পিসে হাজার টাকা দাম বললেও খরচাপাতি মিলিয়ে সেই একই দামে পড়ে গেছে চামড়া। ফলে এখন শুধু পরিবহন খরচ উঠলেই তিনি খুশি হবেন।
এদিকে, ঢাকার ট্যানারিগুলোতে চামড়া সরবরাহ করেন এমন পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান জানান, তিনি ৪০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১,০৭৫ টাকা দামে চামড়া কিনেছেন। শনিবারের হাট থেকে তিনি প্রায় এক হাজার চামড়া কিনেছেন।
রাজারহাটের আরেক ব্যবসায়ী খুরশীদ আলম বাবু বলেন, “সরকার মূল্য নির্ধারণ করলেও সেই দামে তো কেউ চামড়া কিনছে না। দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ট্যানারি মালিকদের মতামত ছাড়াই— এমনটা মনে হয়। ট্যানারিগুলো যে দামে কিনছে, হাটেও মূলত সেই দামই কার্যকর।”
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সহসভাপতি সাঈদ আহমেদ নাসির শেফার্ড বলেন, “মঙ্গলবারের ছোট হাটে ছয় হাজারের মতো চামড়া উঠেছিল। তবে শনিবারের হাটে আমদানি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার গরুর চামড়া। দামে বড় ধরনের পরিবর্তন না থাকায় অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “সরকারের নির্ধারিত দাম ও বাজারদরের মধ্যে যে বড় ফারাক, সেটাই সমস্যার মূল। ফলে মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা নিয়মিতভাবে ঠকছেন। এই অবস্থায় সরকার যদি বাজার পর্যবেক্ষণ না করে শুধুমাত্র দাম নির্ধারণ করে, তাহলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।”
এভাবে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে প্রতিবছরই একই ধরনের সংকটে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন