ঘোষণায় ঘাটতি নেই, বাস্তবায়নে শূন্য: চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাজার বিপর্যস্ত

বাংলাদেশের ‘আমের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আমশিল্প আজ এক গভীর সংকটে। তবে এই সংকট কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়—এটি সৃষ্ট হয়েছে প্রশাসনিক জটিলতা, নীতির অস্পষ্টতা এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চরম ব্যর্থতা থেকে।
চলতি আম মৌসুমে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল—সব আম কেজি দরে বিক্রি হবে এবং প্রতি কেজিতে আড়ৎদাররা ১ টাকা ৫০ পয়সা কমিশন পাবেন। যদিও এসব সিদ্ধান্তে প্রাথমিকভাবে কিছুটা আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি মাঠপর্যায়ে। ফলে একদিকে যেমন চাষিরা লোকসানে আম বিক্রি করছেন, অন্যদিকে কমিশন না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আড়ৎদাররাও।
চাষিদের অভিযোগ, এখনো অনেক জায়গায় ৪৫ কেজির বদলে ৫২-৫৪ কেজিকে ‘এক মণ’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা একপ্রকার প্রতারণা। এই ‘ওজন কাটা’ নিয়মিত ঘটলেও তা ঠেকাতে প্রশাসনের কার্যকর তদারকি নেই বলেই দাবি তাদের।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, হঠাৎ কেজি ভিত্তিক বিক্রির নির্দেশনায় বাজার ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। মান যাচাইয়ে জটিলতা এবং দাম নির্ধারণে স্বচ্ছতার অভাব চাষি-ব্যবসায়ী উভয়ের জন্যই আর্থিক ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
অন্যদিকে, প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী হাটগুলোতে সরকারি তদারকি ও সুষ্ঠু ওজন ব্যবস্থাপনার কথা থাকলেও মাঠপর্যায়ে তার কোনোরূপ উপস্থিতি নেই বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন বাস্তবতায় আম চাষ ও বিপণনের সাথে যুক্ত সকল পক্ষ হতাশা প্রকাশ করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই আমশিল্প শুধু স্থানীয় অর্থনীতির জন্য নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারেও গুরুত্বপূর্ণ। জেলার হাজারো কৃষক, আড়ৎদার, পরিবহন শ্রমিক, প্যাকেজিং কর্মী এবং রপ্তানিকারক এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও নীতিগত বিশৃঙ্খলা এ শিল্পের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের দাবি, অবিলম্বে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি হাটে নিরপেক্ষ ওজন ব্যবস্থাপনা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে মাঠপর্যায়ের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা জরুরি।
চাষিরা বলছেন, “ঘোষণা দিলে হবে না, মাঠে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে আমাদের ঘামের দাম অন্য কেউ তুলে নেবে।”
তারা সতর্ক করছেন, অব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের আমের গ্রহণযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্টদের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে—প্রতিশ্রুতি নয়, চাই বাস্তবায়ন। নইলে এই শিল্পের ধসের দায় চাষিদের নয়, বরং নীতিনির্ধারকদের কাঁধেই বর্তাবে।
আপনার মতামত লিখুন