জরুরি অবস্থা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগে ঐকমত্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিএনপির বিকল্প প্রস্তাব

জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রক্রিয়া এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। এ দুটি বিষয়ে সংবিধানে সংশোধনী এনে নতুন বিধান যুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
রোববার (১৩ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই দুটি ইস্যুতে ঐকমত্য হয়।
জরুরি অবস্থার প্রক্রিয়ায় বিরোধীদলীয় নেতার অংশগ্রহণ
নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করবেন। ওই বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা বা তাঁর অনুপস্থিতিতে উপনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি, ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দের পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ – এই শব্দগুলো সংবিধানে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জীবনের অধিকার ও ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকারসহ কিছু মৌলিক অধিকার স্থগিত করা যাবে না বলেও ঐকমত্য হয়।
প্রধান বিচারপতির নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তি
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন এই বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য হয়েছে। তবে কোনো রাজনৈতিক দল যদি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করে যে জ্যেষ্ঠতম দুজনের মধ্য থেকে নির্বাচন করবে, এবং নির্বাচনে জয়ী হয়, তাহলে সংবিধান সংশোধন করে সেই বিধান যুক্ত করতে পারবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নতুন প্রস্তাব
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য একটি নতুন রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন। এতে পাঁচ ধাপে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিকল্প প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতি সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে উপযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেবেন। প্রয়োজনে একটি কমিটি গঠন করা হবে যার সভাপতিত্ব করবেন রাষ্ট্রপতি। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো যুক্ত করা হবে। পঞ্চম ও সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে রয়েছে ত্রয়োদশ সংশোধনীর ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া।
তবে জামায়াতে ইসলামী এ প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে। দলটির দাবি, প্রস্তাবটির কাঠামোয় অসঙ্গতি রয়েছে এবং আগের আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি হওয়া প্রস্তাবগুলোর অবস্থান পরিষ্কার নয়।
পরবর্তী আলোচনা
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে অন্যান্য দল নতুন প্রস্তাব দিতে পারবে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে চূড়ান্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
কমিশনের আলোচনায় অংশ নেন বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, এমদাদুল হক প্রমুখ।
এই আলোচনার মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কারের পথে এগিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য প্রক্রিয়া।
আপনার মতামত লিখুন