ঝালকাঠির বাসস্ট্যান্ড যেন দুর্ভোগের আরেক নাম

সোলায়মান সুমন, ঝালকাঠি:
প্রকাশ: ২৩ জুলাই, ২০২৫, ১:৩২
ঝালকাঠির বাসস্ট্যান্ড যেন দুর্ভোগের আরেক নাম

প্রতিদিন শত শত যাত্রীর পদচারণায় মুখর এই কেন্দ্রীয় টার্মিনাল এখন অব্যবস্থাপনা, কাদা-পানি আর টয়লেট সংকটে জর্জরিত। ন্যূনতম সুবিধা ছাড়াই যাত্রা করতে হচ্ছে মানুষকে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারী, শিশু ও প্রবীণসহ সব যাত্রীকে। পৌরসভা ও প্রশাসনের আশ্বাস থাকলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন নেই, বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

ঝালকাঠি পৌরসভার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রধান বাসস্ট্যান্ডটি চরম অব্যবস্থাপনায় ভুগছে। প্রতিদিন এখান থেকে শত শত যাত্রী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করলেও নেই কোনো যাত্রীছাউনি, ভাঙাচোরা রাস্তা পেরিয়ে যাত্রীদের উঠতে হয় বাসে। রাস্তায় কাদা-পানি, চলাচলের অনুপযোগী পরিবেশ, টয়লেট সংকট—সব মিলিয়ে বাসস্ট্যান্ডটি যেন যন্ত্রণার নামান্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পুরো স্ট্যান্ডজুড়ে কাদা ও পানি জমে আছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তাগুলোতে কোথাও কোথাও বড় গর্ত, আবার কোথাও পিচ্ছিল কাদা। যাত্রীদের জন্য নেই মাথার ওপর ছাউনি। ফলে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়, আর রোদের তাপে পুড়তে হয়।

বরিশালগামী যাত্রী নাজমা বেগম বলেন, বাসে ওঠার সময় পা রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই। কাদা আর পানি পেরিয়ে কোনোভাবে গাড়িতে উঠতে হয়। ছাউনি নেই, টয়লেট নেই—সবমিলিয়ে নারীদের জন্য অবস্থা ভয়াবহ।

একই অভিযোগ বাস কাউন্টার পরিচালনাকারী হিরু হাওলাদারের। তিনি জানান, প্রতিদিন অসংখ্য বাস ছাড়ে এই স্ট্যান্ড থেকে, কিন্তু যাত্রীসুবিধা বলতে কিছুই নেই। ফলে অনেকে রাগ করে বরিশালের রুপাতলী কিংবা নথুল্লাহবাদ থেকে গাড়িতে চড়েন। পৌরসভায় বহুবার বলেছি, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি পৌরসভার প্রকৌশলী নাজমুল হাসান বলেন, বাসস্ট্যান্ডের দুরবস্থার কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সমস্যা তীব্র আকার নিয়েছে। সাময়িক স্বস্তির জন্য মে মাসে টিআর প্রকল্পে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কিছু মেরামতের কাজ করা হয়েছে, যার মধ্যে টয়লেট সংস্কারও ছিল।

তিনি আরও জানান, দীর্ঘমেয়াদে আমরা বাসস্ট্যান্ডটিকে আধুনিক বাস টার্মিনালে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছি। CTCRP প্রকল্পের অধীনে জমি অধিগ্রহণ করে যাত্রীছাউনি, উন্নত স্যানিটেশন, ড্রেনেজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। পাশের সুগন্ধা নদীর ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, বাসস্ট্যান্ডের দুরবস্থা সত্যিই উদ্বেগজনক। পৌরসভার কাজ করার প্রস্তাব থাকলেও বাজেট আর কার্যসম্পাদনের সামঞ্জস্য না থাকায় বিল অনুমোদন দেইনি। বাসস্ট্যান্ডটি ঝালকাঠির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি, পৌর কর্তৃপক্ষ দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নেবে।

যাত্রীরা বলছেন, ঝালকাঠির মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলার প্রধান বাসস্ট্যান্ডে এমন অব্যবস্থাপনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। দ্রুত উন্নয়ন না হলে ভোগান্তি আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা।