তেহরানে ইসরায়েলের হামলা: নিহত শীর্ষ সেনা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক :
প্রকাশ: ১৩ জুন, ২০২৫, ৫:৩২
তেহরানে ইসরায়েলের হামলা: নিহত শীর্ষ সেনা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা

ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে ইসরায়েল শুক্রবার ভোররাতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস (আইআরজিসি)-এর কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল হোসেইন সালামি, দেশটির পরমাণু শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান ফারেদুন আব্বাসি এবং বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি নিহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থা তাসনিমের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি ও আল জাজিরা।

হামলার পরপরই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইসরায়েলকে এখন একটি তিক্ত ও বেদনাদায়ক পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।” তিনি একে ইরানের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আগ্রাসন বলে আখ্যা দেন।

ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারা জানান, ভোররাতে শতাধিক হামলা চালানো হয় এবং অন্তত আটটি লক্ষ্যবস্তু নির্দিষ্ট করে অভিযান পরিচালিত হয়। আল জাজিরা বলছে, হামলা হয়েছে অন্তত ছয়টি স্থানে, যার মধ্যে ছিল আইআরজিসি সদর দপ্তরও। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কমান্ডার হোসেইন সালামি।

হোসেইন সালামি ২০১৯ সাল থেকে আইআরজিসি’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার নেতৃত্বে ইরান ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করে এবং পরমাণু কর্মসূচিতে গতি আনে। বিশ্লেষকদের মতে, তার মৃত্যু ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব ও প্রতিরক্ষা নীতিতে বড় ধাক্কা।

হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “এই আগ্রাসন জাতিসংঘের সনদের ২ অনুচ্ছেদের ৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছে।” তারা জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর ধারা উল্লেখ করে জানায়, তেহরানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে এবং ইরান ‘যা উপযুক্ত মনে করে’ সেই প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও দাবি করে, যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী, কারণ তারা ইসরায়েলের ‘অ্যাডভেঞ্চারিজমের’ প্রধান সমর্থক। যদিও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, তারা হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত থাকলেও এতে কোনোভাবে জড়িত ছিল না। তবে বিশ্লেষকরা এবং ইরানি কর্মকর্তারা এই দাবি ‘অবিশ্বাস্য’ বলে মনে করছেন।

ইরানি হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েল দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, “খুব শিগগিরই ইরান থেকে পাল্টা হামলা আসতে পারে।” শুক্রবার ভোরে হামলার সময় ইসরায়েলি নাগরিকরা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। পরে সাইরেনের শব্দ এবং মোবাইল সতর্কবার্তায় তারা ঘুম থেকে জেগে ওঠেন বলে জানান জেরুজালেমে অবস্থানরত বিবিসির একজন সংবাদদাতা।

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার এই ঢেউ আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। পরিস্থিতি এখন নজিরবিহীন প্রতিশোধ ও পাল্টা প্রতিক্রিয়ার দিকে এগোচ্ছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।