প্রতিবাদের মুখে অবশেষে পুনর্বহাল পাবনার স্টেডিয়াম ও সুইমিংপুলের নাম

পাবনা স্টেডিয়াম ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ছবি।
তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে পাবনার স্টেডিয়াম ও সুইমিংপুল থেকে মুছে দেয়া স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম পুনর্বহাল করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় যুব ক্রীড়া পরিষদ।
বুধবার (২৮ মে) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের যুগ্ম সচিব মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যার স্মারক নম্বর ৩৪.০৩.০০০০.০০৫.১৩.০৮.২০২৪-৪৭৩। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুুপুরের পর এ বিষয়টি পাবনাবাসীর মধ্যে জানাজানি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ চিঠি ছড়িয়ে পড়ে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ওই পত্রে বলা হয়েছে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক নির্মিত নিম্নোক্ত ক্রীড়া স্থাপনার নাম নির্দেশক্রমে নিম্নরুপে নির্ধারণ করা হলো। এ বার্তার নিচে একটি ছকে দেখানো হয়েছে, পাবনার স্টেডিয়ামের নাম হবে শহীদ এ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়াম। যেটি সম্প্রতি পরিবর্তন করে জেলা স্টেডিয়াম করা হয়েছিলো। অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের নামে থাকা পূর্বের নাম পুনর্বহাল করা হয়েছে।
একইভাবে সুইমিংপুলের নাম পুনর্বহাল করে পাবনায় স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুলের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মুছে দিয়ে করা হয়েছিল পাবনা জেলা সুইমিংপুল। নাম পুনর্বহাল করায় শহীদ পরিবার সহ পাবনাবাসী স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
শহীদ আমিন উদ্দিনের ছেলে সদরুল আমিন বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাবনাবাসী যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানেও তারা সেভাবেই প্রতিবাদ জানিয়েছে। সরকারকে শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়াম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল সুইমিংপুলের নাম পুনর্বহালে বাধ্য করেছে। এজন্য পাবনাবাসীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ছেলে নুর ইসলাম বলেন, ‘নাম পরিবর্তনের ঘটনায় অত্যন্ত আহত হয়েছিলাম। কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।’
পাবনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ মাসুম বগা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের আবেগের জায়গা। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের অপমান কখনোই মেনে নেবার মত নয়। পাবনাবাসীও মেনে নিতে পারিনি। এ ধরণের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে ভবিষ্যতে সরকারের সচেতন হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল আদেশের চিঠি এখনও আমরা হাতে পাইনি। আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে জেনেছি এবং চিঠিটি আমারও নজরে এসেছে। নির্দেশনা হাতে পেলেই নাম পরিবর্তন করে দেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নির্মিত দেশের বিভিন্ন জেলার স্টেডিয়াম ও সুইমিং পুলের নাম একযোগে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এক প্রজ্ঞাপন জারী করে এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশনাও দেয়া হয়।
এতে পাবনার শহীদ এ্যাডভোকেট আমিনউদ্দিন স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে জেলা স্টেডিয়াম, পাবনা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল সুইমিং পুলের নাম পরিবর্তন করে পাবনা জেলা সুইমিংপুল করা হয়। এরপর মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে স্টেডিয়াম ও সুইমিংপুলে নতুন নাম লেখা হলে পাবনাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন। এর মাঝেই নাম পুনর্বহালের খবরে স্বস্তি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল সুইমিংপুলের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ( ২৯ মে) দুপুরে সচেতন নাগরিক সমাজের আয়োজনে পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে অবশ্য নাম পুনস্থাপনের বিষয়টি জানার পর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা।
আপনার মতামত লিখুন