বরেন্দ্র অঞ্চলে খরার কবলে কৃষিজমি

কৃষি ও পানির টেকসই ব্যবস্থাপনায় খানি’-র সংলাপ, বিশ্ব খরা ও মরুকরণ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি ও পানি ব্যবস্থাপনার সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে রাজশাহীতে এক সংলাপের আয়োজন করেছে খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক ‘খানি’-এর সদস্য সংস্থা ‘পরিবর্তন’। “ভূমি পুনরুদ্ধার” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজশাহীর হোটেল ওয়ারিসনে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদ সভাপতি কল্পনা রায়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক তরিকুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনি বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান। আলোচনায় আরও অংশ নেন রুলফাও এর নির্বাহী পরিচালক আফজাল হোসেন, রাজশাহী জেলা কৃষক দলের সভাপতি শফিকুল আলম সমাপ্ত এবং পরিবর্তনের পরিচালক রাশেদ রিপন।
খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ), স্থানীয় কৃষক, আদিবাসী প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক মুস্তাফিজুর রহমান খান, পার্টনার পরিচালক আলিমা খাতুন, বারসিক সমন্বয়কারী শহিদুল আলম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমল রাজোয়ার, আসাউস নির্বাহী পরিচালক রাজকুমার সাও, দিনের আলো পরিচালক মোহনা এবং কৃষক প্রতিনিধি মীর আনাম।
তারা বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে খরার প্রকোপে কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে। পানির অভাবে কৃষিকাজ অসম্ভব হয়ে পড়েছে অনেক এলাকায়। ফলস্বরূপ প্রান্তিক কৃষকেরা জমি হারাচ্ছেন এবং তাদের জীবিকা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
বিশ্লেষণে উঠে আসে, দেশের ২২টি জেলা—যা মোট জেলার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি—খরা-প্রবণ। বরেন্দ্র অঞ্চলে বর্তমানে অনাবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশে। ১৯৭১ সালের পর থেকে ক্রমান্বয়ে চাষযোগ্য জমি হারিয়ে যাচ্ছে।
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, খরা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু-সহনশীল কৃষি পরিকল্পনা গ্রহণ, পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা, ফসলের বৈচিত্র্য নিশ্চিতকরণ, আবহাওয়াভিত্তিক কৃষি তথ্য সেবা চালু এবং মৃতপ্রায় জমিতে জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
এছাড়াও জাতীয় বাজেটে জলবায়ু অভিযোজন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়। ভূমিহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জমির ওপর অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তোলেন বক্তারা।
আপনার মতামত লিখুন