বাগেরহাট বাস মালিক সমিতিতে অনিয়মের অভিযোগ

By বাগেরহাট প্রতিনিধি :

3 Min Read

বাগেরহাট বাস মালিক সমিতিতে নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন একটি আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা। মালিকদের অভিযোগ, “বিএনপির নাম ভাঙিয়ে” তারা অবৈধভাবে সমিতির কার্যক্রম দখলে রেখেছেন এবং চাঁদা আদায়সহ আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সমিতির বর্তমান কমিটি কীভাবে, কার অনুমতিতে এবং কার নির্দেশে চলছে—এসব প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব না থাকায় ব্যাপক ক্ষোভে ফুঁসছেন বাস মালিকরা। তাঁরা দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ ও বৈধ কমিটি গঠনের জোর দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বিএনপি ও ইসলামি আন্দোলনসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমর্থনে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক করা হয় মশিউর রহমান সেন্টুকে এবং সদস্য সচিব হন মো. শহিদুল ইসলাম। সদস্য ছিলেন শাহজাহান মিনা, জিয়াউদ্দিন শেখ ও আখতারুজ্জামান। নিয়ম অনুযায়ী, কমিটি গঠনের ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা ছিল।

তবে সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্বাচন হয়নি। একবার নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অজানা কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এই সময়ের মধ্যে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় ও খরচ হয়েছে, কিন্তু মালিকরা কিছুই জানেন না। আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা ও স্বচ্ছতার অভাব।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে বাসস্ট্যান্ড এলাকার লেক ফুজি হোটেলে বাস মালিক সমিতির জরুরি সভায় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী খুলনা জিডিএলজিকে অবহিত করার জন্য একটি চিঠি প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু আহ্বায়ক মশিউর রহমান সেন্টু চিঠিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রশ্ন তোলেন, এই চিঠি প্রস্তুতের এখতিয়ার কে দিয়েছে। এরপর থেকেই মালিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।

জাকির হোসেন, নীহার রঞ্জন সাহা, স্বাধীন মোল্লা, সর্দার লিয়াকত আলীসহ একাধিক বাস মালিক অভিযোগ করেন, বিএনপি এবং সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকা ব্যক্তিরাই এই সমিতি দখলে রেখেছেন। যাঁরা কখনো বাস মালিকদের আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন না, তারাই এখন ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বাসে ৫০ টাকা করে অতিরিক্ত চাঁদাও তোলা হচ্ছে। তাঁরা জানতে চান, এই চাঁদার টাকা কোথায় যাচ্ছে, কার কাছে আছে, এবং এর হিসাব কে রাখছে। মালিকদের দাবি, “এইভাবে আর চলতে দেওয়া যাবে না। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনায় ফিরে যেতে হবে।”

এই বিষয়ে সমিতির আহ্বায়ক মশিউর রহমান সেন্টু বলেন, “কমিটির মেয়াদ ৪৫ দিন হলেও নানা প্রতিকূলতায় নির্বাচন সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের পক্ষ থেকেও নির্বাচনের চেষ্টা রয়েছে এবং শিগগিরই তা সম্পন্ন করা হবে।” তিনি দাবি করেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সমন্বয়ক বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন।

চাঁদা আদায়ের বিষয়ে সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, “সরকারি নির্ধারিত হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে, অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। আয়-ব্যয়ের হিসাব অফিস কর্মচারীদের মাধ্যমে সংরক্ষিত আছে।”

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, “বর্তমান কমিটির বিষয়ে আমি অবগত। অনেক বাস মালিক দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। আজকেও একজন মালিক জানিয়েছে, তারা সম্মিলিতভাবে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছেন। খুব শিগগিরই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ বৈধ কমিটি গঠন করা হবে।”

বাস মালিকরা বলছেন, সমিতির ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে অবিলম্বে নির্বাচন দিতে হবে, নয়তো অনিয়ম আর চাঁদাবাজির অভিযোগ বাড়তেই থাকবে।

- Advertisement -
newsnextbd20
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাগেরহাট বাস মালিক সমিতিতে অনিয়মের অভিযোগ

By বাগেরহাট প্রতিনিধি :

3 Min Read

বাগেরহাট বাস মালিক সমিতিতে নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন একটি আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা। মালিকদের অভিযোগ, “বিএনপির নাম ভাঙিয়ে” তারা অবৈধভাবে সমিতির কার্যক্রম দখলে রেখেছেন এবং চাঁদা আদায়সহ আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সমিতির বর্তমান কমিটি কীভাবে, কার অনুমতিতে এবং কার নির্দেশে চলছে—এসব প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব না থাকায় ব্যাপক ক্ষোভে ফুঁসছেন বাস মালিকরা। তাঁরা দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ ও বৈধ কমিটি গঠনের জোর দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বিএনপি ও ইসলামি আন্দোলনসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমর্থনে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক করা হয় মশিউর রহমান সেন্টুকে এবং সদস্য সচিব হন মো. শহিদুল ইসলাম। সদস্য ছিলেন শাহজাহান মিনা, জিয়াউদ্দিন শেখ ও আখতারুজ্জামান। নিয়ম অনুযায়ী, কমিটি গঠনের ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা ছিল।

তবে সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্বাচন হয়নি। একবার নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অজানা কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এই সময়ের মধ্যে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় ও খরচ হয়েছে, কিন্তু মালিকরা কিছুই জানেন না। আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা ও স্বচ্ছতার অভাব।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে বাসস্ট্যান্ড এলাকার লেক ফুজি হোটেলে বাস মালিক সমিতির জরুরি সভায় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী খুলনা জিডিএলজিকে অবহিত করার জন্য একটি চিঠি প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু আহ্বায়ক মশিউর রহমান সেন্টু চিঠিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রশ্ন তোলেন, এই চিঠি প্রস্তুতের এখতিয়ার কে দিয়েছে। এরপর থেকেই মালিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।

জাকির হোসেন, নীহার রঞ্জন সাহা, স্বাধীন মোল্লা, সর্দার লিয়াকত আলীসহ একাধিক বাস মালিক অভিযোগ করেন, বিএনপি এবং সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকা ব্যক্তিরাই এই সমিতি দখলে রেখেছেন। যাঁরা কখনো বাস মালিকদের আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন না, তারাই এখন ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বাসে ৫০ টাকা করে অতিরিক্ত চাঁদাও তোলা হচ্ছে। তাঁরা জানতে চান, এই চাঁদার টাকা কোথায় যাচ্ছে, কার কাছে আছে, এবং এর হিসাব কে রাখছে। মালিকদের দাবি, “এইভাবে আর চলতে দেওয়া যাবে না। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনায় ফিরে যেতে হবে।”

এই বিষয়ে সমিতির আহ্বায়ক মশিউর রহমান সেন্টু বলেন, “কমিটির মেয়াদ ৪৫ দিন হলেও নানা প্রতিকূলতায় নির্বাচন সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের পক্ষ থেকেও নির্বাচনের চেষ্টা রয়েছে এবং শিগগিরই তা সম্পন্ন করা হবে।” তিনি দাবি করেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সমন্বয়ক বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন।

চাঁদা আদায়ের বিষয়ে সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, “সরকারি নির্ধারিত হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে, অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। আয়-ব্যয়ের হিসাব অফিস কর্মচারীদের মাধ্যমে সংরক্ষিত আছে।”

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, “বর্তমান কমিটির বিষয়ে আমি অবগত। অনেক বাস মালিক দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। আজকেও একজন মালিক জানিয়েছে, তারা সম্মিলিতভাবে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছেন। খুব শিগগিরই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ বৈধ কমিটি গঠন করা হবে।”

বাস মালিকরা বলছেন, সমিতির ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে অবিলম্বে নির্বাচন দিতে হবে, নয়তো অনিয়ম আর চাঁদাবাজির অভিযোগ বাড়তেই থাকবে।

- Advertisement -
newsnextbd20
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *