বিয়ে ঠিক করতে যাচ্ছিলেন জামাই-শ্বশুর, চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫, ৭:৩৯
বিয়ে ঠিক করতে যাচ্ছিলেন জামাই-শ্বশুর, চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় বিয়ের দিন ঠিক করতে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন দুইজন। পথে স্থানীয়দের চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তাদের মৃত্যু হয়।

শনিবার রাত ৯টার দিকে সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন—তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুরের রুপলাল দাস (৪০) ও মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)। তারা সম্পর্কে জামাই ও শ্বশুর।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, রুপলাল দাসের মেয়ে নুপুর দাসের সঙ্গে মিঠাপুকুরের শ্যামপুর এলাকার ডিপজল দাসের বিয়ে ঠিক হচ্ছিল। শনিবার বিয়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য প্রদীপ দাস ভ্যান চালিয়ে রওনা দেন রুপলালের বাড়ির দিকে। রাস্তা না চেনায় তিনি তারাগঞ্জের কাজীরহাট এলাকায় গিয়ে রুপলালকে ফোন করেন। রুপলাল সেখানে গিয়ে প্রদীপের সঙ্গে ভ্যানে করে বাড়ির পথে রওনা হন।

পথে বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয়রা ভ্যান চোর সন্দেহে তাদের আটক করে। এ সময় প্রদীপের ভ্যানে থাকা একটি বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল উদ্ধার হয়। একটি বোতলের ঢাকনা খুলতেই ভেতরের তরলের গন্ধে দুই ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে সন্দেহ আরও বেড়ে যায় এবং শুরু হয় মারধর।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বটতলা থেকে মারতে মারতে তাদের বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আনা হয়। সেখানে অচেতন অবস্থায় ফেলে রাখা হয় দুজনকে। রাত ১১টার দিকে পুলিশ উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক রুপলালকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত প্রদীপকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রবিবার ভোরে তিনিও মারা যান।

নিহত রুপলালের ভাই খোকন দাস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দেশে কি কোনো আইন নেই? চোর সন্দেহ হলেই কি পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে? আমরা জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি চাই।”

তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক জানান, “চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুইজন মারা গেছেন। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।”