ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ ৭ পণ্যের রপ্তানি, উৎকণ্ঠায় ব্যবসায়ী মহল

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা:
প্রকাশ: ১৯ মে, ২০২৫, ১:৫৬
ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ ৭ পণ্যের রপ্তানি, উৎকণ্ঠায় ব্যবসায়ী মহল

বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ সাতটি পণ্যের স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। এ সিদ্ধান্তে দুই দেশের ব্যবসায়ী মহলে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) শনিবার এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রয়েছে: তৈরি পোশাক, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, বেকারি ও কনফেকশনারির তৈরি খাদ্য, তুলা ও সুতার ঝুট, পিভিসিসহ প্লাস্টিক পণ্য এবং কাঠের তৈরি আসবাব। এই নিষেধাজ্ঞা আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গের চেংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

তবে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল ও পাথর আমদানি চালু থাকবে। একই সঙ্গে ভারতের মাধ্যমে ভুটান ও নেপালে পণ্য রপ্তানিও অব্যাহত থাকবে। পোশাক পণ্য শুধুমাত্র কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নভসেবা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।

ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, নিষেধাজ্ঞার ফলে দুই দেশেরই ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ব্যবসার স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এ সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রতিফলন। রাজনৈতিকভাবে সমাধান না হলে এ সংকট আরও গভীর হবে। সম্প্রতি ব্যাংককে নরেন্দ্র মোদি ও অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠকের প্রেক্ষাপটেও তিনি বিষয়টিকে বিস্ময়কর বলে উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে কিছু জানায়নি। তবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে তিনি আশাবাদী। তাঁর মতে, নিষেধাজ্ঞায় ভারতীয় আমদানিকারকরাও ক্ষতির মুখে পড়বেন।

আখাউড়া স্থলবন্দরে অচলাবস্থা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে কার্যত অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছ ছাড়া অন্য কোনো পণ্য রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। বন্দরে কর্মরত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শুল্ক কর্মকর্তা ও অন্যান্য স্টাফ অলস সময় কাটাচ্ছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান বলেন, সব ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতির মুখে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ী। দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান তিনি।

পণ্য রপ্তানি ও আমদানি পরিসংখ্যান

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য ছিল মূল। একই সময়ে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য।

আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে গত অর্থবছরে প্রায় ৪২৭ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম দশ মাসেই রপ্তানি হয়েছে ৪৫৩ কোটি টাকার পণ্য। অপরদিকে, আমদানি ছিল তুলনামূলক কম, মাত্র ৭ কোটি টাকার মতো।

ভারতের সরকারি সূত্র বলছে, এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের সুতা ও চাল আমদানিতে দেওয়া প্রতিবন্ধকতার পাল্টা পদক্ষেপ। ভারতের দাবি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে সমতা আনতেই এই সিদ্ধান্ত। তারা মনে করে, বাংলাদেশ একতরফাভাবে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। নয়াদিল্লি চায়, সম্পর্ক হোক পারস্পরিক স্বার্থ ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।

দুই দেশের মধ্যে বর্তমান নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক যে সংকটে পড়েছে, তা দ্রুত রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সমাধান না হলে দুই পক্ষেরই অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, অনিশ্চয়তা নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।