বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। নতুন এই বিধিনিষেধ অনুযায়ী, এখন থেকে বাংলাদেশি এসব পণ্য শুধুমাত্র কলকাতা ও নাভা শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।
শনিবার (১৭ মে) হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (DGFT) নতুন এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে তৈরি পোশাক (RMG), প্লাস্টিক পণ্য, কাঠের আসবাব, কার্বনেটেড ও স্বাদযুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং তুলা ও তুলার বর্জ্যসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১১টি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে না।
তবে, এই নিষেধাজ্ঞা ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের ভুটান ও নেপালে পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে জানিয়েছে DGFT।
ভারতীয় পক্ষের দাবি, বাংলাদেশ একতরফাভাবে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের পণ্য প্রবেশে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। গত ১৩ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের সুতা রপ্তানি স্থলপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি হিলি ও বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চাল রপ্তানিও ১৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে।
ভারতের অভিযোগ, এসব রপ্তানি পণ্য কঠোরভাবে পরীক্ষা ও পরিদর্শনের মুখে পড়ায় বিলম্ব ঘটছে এবং তা ব্যবসায়িক স্বার্থে আঘাত হানছে।
ভারতীয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পণ্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাজারে অনায়াসে প্রবেশ করলেও, ওই অঞ্চলের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে আঞ্চলিক শিল্প ও উৎপাদন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের আরোপিত ট্রানজিট ফি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ভারত। সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতিটন পণ্য পরিবহনে প্রতি কিলোমিটারে ১.৮০ টাকা করে ট্রানজিট ফি আদায় করছে, যা তাদের মতে ‘অত্যধিক’ ও ‘অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক’।
দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য উত্তেজনা নতুন নয়। তবে, গত বছর আগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকে পরিস্থিতি আরও স্পষ্টভাবে উত্তপ্ত হয়েছে।
ভারতের উদ্বেগের কেন্দ্রে রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর দমন-পীড়ন এবং উগ্রবাদের উত্থান। ভারত দাবি করছে, বাংলাদেশ এই প্রবণতা দমনে ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়া, ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে দেওয়া এক মন্তব্য ভারতকে ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি বলেছিলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো স্থলবেষ্টিত এবং এই অঞ্চলের সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ।” ভারতের দৃষ্টিতে, এ মন্তব্য তাদের ভৌগোলিক নিরাপত্তা ও ট্রান্সশিপমেন্ট নীতির জন্য উদ্বেগজনক।
এই ঘটনার পরপরই ভারত বাংলাদেশের জন্য তাদের দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। তার ধারাবাহিকতায় আজকের (১৭ মে) পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট বাণিজ্য হয়েছে ১২.৯০ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে পণ্য আমদানি করেছে ১১.০৬ বিলিয়ন ডলারের, অথচ রপ্তানি করেছে মাত্র ১.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে এই বাণিজ্য ভারসাম্য আরও প্রতিকূল হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আপনার মতামত লিখুন