মির্জাপুরে জাতীয় নির্বাচনের মাঠ গরম, সরব বিএনপি-জামায়াত

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১৭ জুন, ২০২৫, ৪:২৯
মির্জাপুরে জাতীয় নির্বাচনের মাঠ গরম, সরব বিএনপি-জামায়াত

টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসন ঘিরে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক মাঠে সরব হয়ে উঠেছে বিএনপি ও জামায়াত। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে নির্বাচনের সময় নিয়ে আলোচনার পর এ তৎপরতা আরও জোরদার হয়েছে বলে জানা গেছে।

আসনটিতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলের সাবেক জিএস সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব ব্যাপক জনসংযোগ ও উঠান বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মিছিল, শোভাযাত্রা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সরব রয়েছেন তারা।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী টাঙ্গাইল জেলা শাখার শিক্ষা বিষয়ক সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল্লাহ তালুকদারও প্রচারণা শুরু করেছেন। পৌরসভা ও ইউনিয়নজুড়ে পোস্টার সাঁটানো, সভা-সমাবেশসহ নানা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতারা গা ঢাকা দিয়েছেন

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মির্জাপুরের রাজনৈতিক চিত্র একেবারে বদলে গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, অবসরপ্রাপ্ত মেজর খন্দকার আব্দুল হাফিজ, রাফিউর রহমান ইউসুফজাই সানি চৌধুরী, মীর এনায়েত হোসেন মন্টু, মীর শরীফ মাহমুদসহ অনেকেই রয়েছেন নিখোঁজের তালিকায়।

প্রয়াত সাংসদ একাব্বর হোসেনের বাড়ি, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভর রাজনৈতিক কার্যালয়, এমনকি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতার বাসাও এখন জনমানবশূন্য। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাঙচুর, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে অগ্নিসংযোগ, ক্লাব ভবনে হামলা—এসব ঘটনার পর আওয়ামী নেতারা এলাকা ছেড়ে গেছেন।

নির্বাচন নিয়ে কৌতূহল ও বিশ্লেষণ

মির্জাপুরে একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন এখন প্রধান আলোচনার বিষয়। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে এমন খবরে এলাকায় এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে বিএনপির মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন—তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে সাইদুর রহমান সোহরাব বিএনপির মনোনয়ন পেলেও তা পরিবর্তন করে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীকে দেওয়া হয় এবং তিনি বিজয়ী হন। এরপর পরবর্তী নির্বাচনে তিনবার তিনি আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেনের কাছে পরাজিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আবার ২০২৩ সালের অক্টোবরে আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে হামলা চালান সাবেক এমপি শুভর ব্যক্তিগত সহকারী।

বিএনপি-জামায়াতের প্রচারণা তুঙ্গে

বর্তমানে মির্জাপুরজুড়ে প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় উঠান বৈঠক, মৃত ও বিয়েবাড়িতে উপস্থিতি, পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা। কর্মীদের চলাচল, পোস্টারিং, ব্যানার-প্ল্যাকার্ডে নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ও সাইদ সোহরাবের বাসায় নেতাকর্মীদের আনাগোনা বেড়েছে কয়েকগুণ। তাদের কাছে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি নানা সমস্যার সমাধান চাইছেন সাধারণ মানুষ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ শূন্য এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে মাঠে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে বিএনপি ও জামায়াত। তবে চূড়ান্ত মনোনয়ন কারা পাবেন এবং নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা জমবে—তা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

তবে এলাকাবাসী মনে করছে, যেই জয়ী হোক, এবার মির্জাপুরের রাজনীতিতে বড় ধরনের পালাবদল অনিবার্য।