যুক্তরাজ্যে সাবেক মন্ত্রী জাবেদের সম্পদ জব্দ করল এনসিএ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ১২ জুন, ২০২৫, ৪:৫৮
যুক্তরাজ্যে সাবেক মন্ত্রী জাবেদের সম্পদ জব্দ করল এনসিএ

আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পত্তি জব্দ করেছে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA)। কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের আবেদনের পর যুক্তরাজ্য এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।

মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে আল জাজিরার অনুসন্ধানী শাখা আই-ইউনিট-কে পাঠানো বিবৃতিতে এনসিএ জানিয়েছে, “চলমান দেওয়ানি অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি সম্পদ জব্দের আদেশ পেয়েছে এনসিএ।” যদিও ঠিক কতগুলো সম্পদ জব্দ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি সংস্থাটি।

এই খবর এমন সময়ে সামনে এলো, যখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি যুক্তরাজ্য সরকারকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে দিতে আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

এর আগে মে মাসে এনসিএ আরও দুই বাংলাদেশি—সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের—মোট ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছিল। এবার সাবেক মন্ত্রী জাবেদও যুক্ত হলেন সেই তালিকায়।

২০২৪ সালে প্রচারিত আল জাজিরার প্রামাণ্যচিত্র The Minister’s Millions-এ উঠে এসেছিল যুক্তরাজ্যে জাবেদের সাড়ে তিনশরও বেশি সম্পত্তির মালিকানা, যার মধ্যে লন্ডনের সেন্ট জন’স উডে দেড় কোটি ডলারে কেনা একটি বিলাসবহুল বাড়িও ছিল। সেই বাড়িটিও এবার জব্দের তালিকায় রয়েছে বলে আই-ইউনিট দাবি করেছে।

প্রামাণ্যচিত্রে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে জাবেদ নিজেই তার বিদেশি সম্পদের কথা তুলে ধরেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি আসলে তার (শেখ হাসিনার) ছেলের মতো।”

এর আগে দ্য গার্ডিয়ান এবং অবজারভার-এর যৌথ অনুসন্ধানে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশি ধনী ও প্রভাবশালী রাজনীতিকদের মালিকানায় যুক্তরাজ্যে ৩৫০টির বেশি সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদ কিনতে ব্যবহার করা হয়েছে অফশোর কোম্পানি ও পাচার হওয়া অর্থ। মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি পাউন্ড বা প্রায় ৬,০৮০ কোটি টাকা।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, শেখ হাসিনার সরকারের এক মন্ত্রীর নামে বিদেশে একাধিক কোম্পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। পরে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানান, সেই মন্ত্রী হচ্ছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

জাবেদ অবশ্য ২০২৫ সালের মার্চে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সম্পদের মালিকানা স্বীকার করেন, তবে দাবি করেন এগুলো বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ দিয়ে কেনা হয়নি। তিনি বলেন, “আমার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু বিদেশে ব্যবসা শুরু করেছিলেন ৫০ বছর আগে। আমি তারই উত্তরাধিকার।”

এদিকে, এনসিএর জব্দ আদেশের ফলে এখন যুক্তরাজ্যে জাবেদের সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি কিংবা ব্যবহারে বিধিনিষেধ তৈরি হয়েছে।