যুক্তরাষ্ট্রের ট্রান্সশিপমেন্ট নীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য বড় ঝুঁকি: ইআইইউ

বিশেষ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ৬ আগস্ট, ২০২৫, ১২:০৯
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রান্সশিপমেন্ট নীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য বড় ঝুঁকি: ইআইইউ

যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে যেভাবে ট্রান্সশিপমেন্ট ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে, তা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির জন্য স্পষ্টভাবেই নেতিবাচক—এমন মন্তব্য করেছেন ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (EIU) এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ নিক মারো। তাঁর মতে, ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলের ওপর ভিত্তি করে যেসব কোম্পানি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিনিয়োগ করেছে, তাদের এখন এই নতুন ঝুঁকি গভীরভাবে বিবেচনায় নিতে হবে।

চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত একটি নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, কোনো পণ্যের আমদানিতে রুট পরিবর্তন বা ট্রান্সশিপমেন্টের প্রমাণ মিললে তার ওপর ৪০ শতাংশ জরিমানা এবং অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এ সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার থেকেই কার্যকর হচ্ছে। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট দেশ অনুযায়ী পণ্যভেদে আরও ১০ থেকে ৪১ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য চীন হলেও, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চীন-নির্ভর রপ্তানিকেন্দ্রিক অর্থনীতিগুলোর ওপরও এর গুরুতর প্রভাব পড়বে। বিশেষত, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো যেগুলো চীনের সাথে সরবরাহ চেইনে জড়িত, তারা চাপে পড়বে।

মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি কেবাংসান-এর সহযোগী অধ্যাপক পুয়ান ইয়াতিম বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র কেবলমাত্র এমন পণ্যকে ট্রান্সশিপমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করে, যেগুলো চীন থেকে সামান্য প্রক্রিয়াজাত হয়ে পুনরায় রপ্তানি করা হয়, তাহলে প্রভাব সীমিত থাকবে। কিন্তু যদি পণ্যে চীনা উপাদান থাকলেই শাস্তির আওতায় আনা হয়, তাহলে তা এই অঞ্চলের জন্য ভয়াবহ হবে।”

গত কয়েক বছরে ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলের আওতায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে চীনা বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চীনের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশে ৭.১ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯.৩ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে এই অঞ্চলে চীনের রপ্তানি ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৮৭ বিলিয়ন ডলার।

তবে এই প্রবৃদ্ধির পেছনে কিছু পণ্যের উৎপত্তিস্থল নিয়ে অনিয়ম রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করছে। এর ভিত্তিতে ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ‘অবৈধ ট্রান্সশিপমেন্টের কেন্দ্রস্থল’ বলে বিবেচনা করছে।

চীন হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, যদি কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন বাণিজ্যিক চুক্তি করে যা চীনের স্বার্থের বিরোধী হয়, তাহলে তারা কঠোর পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।

এ পরিস্থিতিতে অঞ্চলটির বিভিন্ন দেশ নিজস্ব অবস্থান নিচ্ছে। মালয়েশিয়া ঘোষণা দিয়েছে, এখন থেকে বেসরকারি সংস্থা নয়, বরং রফতানির উৎসের সনদ দেবে সরকার নিজেই। ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপে একমত হয়েছে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া প্রকাশ্যে এ নীতির বিরোধিতা করছে।

তবে এত কিছুর পরও ট্রান্সশিপমেন্ট সংক্রান্ত নতুন এই শুল্কনীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেসরকারি খাতের জন্য বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করছে বলে মনে করেন এপ্যাক অ্যাডভাইজার্সের প্রধান নির্বাহী স্টিভ ওকুন। তাঁর মতে, এই নীতি একপ্রকার “বাণিজ্যের সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণের দ্বার খুলে দিয়েছে।”