যৌন হয়রানির অভিযোগে শাস্তি পাওয়া শিক্ষকদের পক্ষ নিলেন সিন্ডিকেট সদস্য

যৌন হয়রানির অভিযোগে
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে শাস্তি সুপারিশের পর সেই সিদ্ধান্তকে ‘মাত্রাতিরিক্ত’ আখ্যা দিয়ে সিন্ডিকেট সদস্য ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকারের অবস্থান ঘিরে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের এই অধ্যাপক সম্প্রতি রেজিস্ট্রার বরাবর একটি চিঠি দিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটে নেওয়া সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার দাবি জানান। তাঁর মতে, যৌন হয়রানির প্রমাণ যথেষ্ট নয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনও যথাযথভাবে উপস্থাপন হয়নি। তবে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, এ ধরনের সাফাই মূলত যৌন হয়রানির মতো গুরুতর অভিযোগকে হালকাভাবে দেখার একটি অজুহাত মাত্র।
অভিযুক্তরা হলেন, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলী রেজওয়ান তালুকদার এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিন। দুজনের বিরুদ্ধেই একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি, বডি শেমিং এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সিন্ডিকেট সভায় তাদের শাস্তি (পদাবনতি) সুপারিশ করা হয়।
তবে আমজাদ হোসেন তার চিঠিতে দাবি করেন, তদন্ত প্রতিবেদন পুরোপুরি পঠিত হয়নি এবং কিছু সিদ্ধান্ত সভায় আলোচনা ছাড়াই নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “শুধুমাত্র পরীক্ষা সংক্রান্ত অসতর্কতা ও বডি শেমিং-এর কিছু লক্ষণ পাওয়া গেছে। তাই শাস্তিগুলো মাত্রাতিরিক্ত।” তাঁর এমন বক্তব্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট’স নেটওয়ার্ক, কুবি’র সভাপতি নাইমুর রহমান ভূইয়া বলেন, সিন্ডিকেট সদস্য হয়ে এমন বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং ভুক্তভোগীদের প্রতি অসম্মান। এটি যৌন হয়রানিকে হালকাভাবে দেখার সংস্কৃতিকে উৎসাহ দেয়।
আইন বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপক বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক ফিডুশিয়ারি ভিত্তিক। এ সম্পর্ক ভেঙে যৌন হয়রানির মতো অপরাধ করলে সেটিকে কোনোভাবেই হালকা বলা যায় না। আর কেউ যদি বডি শেমিংকে অপরাধ না মনে করেন, তবে তার চিন্তার মান নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
যৌন হয়রানি সেলের সদস্য সচিব শারমিন রেজোয়ানা জানান, বডি শেমিং ও অশালীন মন্তব্য যৌন হয়রানির আওতায় পড়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় এর স্পষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে।
চিঠি দেওয়ার বিষয়ে আমজাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রতিবেদকের ফোন কেটে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যরা জানিয়েছেন, সব সিদ্ধান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য ড. মাসুদা কামাল এবং প্রক্টর আব্দুল হাকিম একই বক্তব্য তুলে ধরেন।
তবে আমজাদ হোসেনের এই অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের বড় অংশের কাছে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে নেওয়া অবস্থানকে দুর্বল করার চেষ্টা বলেই বিবেচিত হচ্ছে। বিষয়টি এখন বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে।যৌন হয়রানির অভিযোগে
আপনার মতামত লিখুন